বুধবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাত্র পাঁচ মিনিটে সেনজেন ভিসা!

গ্রেফতার প্রতারক চক্রের চারজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাত্র পাঁচ মিনিটে পাসপোর্টে ইউরোপের সেনজেন ভিসা লাগিয়ে দিত ওরা। তবে আস্থা অর্জনের জন্য এর আগে তারা দফায় দফায় নিয়ে নিত প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র। অভিনব কায়দায় দেশের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে তারা হাতিয়ে নিত লাখ লাখ টাকা। সেনজেন ভিসা তৈরির প্রতারক চক্রের কর্মকাণ্ড দেখে রীতিমতো বিস্মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। তবে সোমবার দিবাগত রাতে এই চক্রের দীর্ঘদিনের মৌচাকে ঢিল মেরেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের একটি দল। জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. কায়সার রিজভী কোরায়েশীর নেতৃত্বে একটি দল ভিসা বানানোর গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামসহ রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে এই চক্রের চার সদস্যকে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন জিয়াউল  হক ওরফে জুয়েল, মো. জাকারিয়া মাহামুদ, মো. মাহবুবুর রহমান ও মো. মামুন হোসেন।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, ইউরোপের সেনজেন ভিসা দেওয়া হবে বলে বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো। ওই ভিসা করার জন্য দফায় দফায় প্রয়োজনীয় কাগজ নেওয়া হতো গ্রাহকের কাছ থেকে। ভিসা দেওয়ার পর গ্রাহকের কাছ থেকে ভিসার জন্য নেওয়া হতো মোটা অঙ্কের টাকা। ভিসা দিয়ে ভ্রমণের দিন ও ফ্লাইট নম্বর জানানো হতো। কিন্তু যখন ভ্রমণের তারিখ আসত, তখন তাকে ফোন করে বলা হতো, তার ভ্রমণের তারিখ বদলেছে।

 কিন্তু সেই বদলি তারিখ কবে, তা আর জানানো হতো না।

আবদুল বাতেন বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১৪টি জাল সেনজেন ভিসাযুক্ত বাংলাদেশি পাসপোর্ট, ব্যাংকের জাল হিসাব বিবরণী এবং ভিসা প্রস্তুতের বিপুল পরিমাণ স্টিকার পেপার, সাইপ্রাসে পাঠানোর জন্য জাল আমন্ত্রণপত্র, ব্যাংক গ্যারান্টি, জাল নথি প্রস্তুতের জন্য কম্পিউটার, মনিটর, স্ক্যানার ও প্রিন্টারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতার ব্যক্তিদের দেওয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের বরাত দিয়ে ডিবির (উত্তর) উপকমিশনার মশিউর রহমান জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে ও সাইপ্রাসে জাল ভিসার মাধ্যমে পাঠানোর কথা বলে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। পাসপোর্টে তাদের লাগানো সেনজেন ভিসা এতটাই নিখুঁত যে, যে কেউ খালি চোখে বিশ্বাসই করতে পারবেন না যে এগুলো নকল ভিসা। উত্তরার সিঙ্গাপুর প্লাজা, কাবাব ফ্যাক্টরি, আইচি হাসপাতালের সামনে ও আজমপুর আজিজ কোঅপারেটিভ মার্কেটের সামনে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই চক্রের আরও কিছু সদস্যকে আমরা খুঁজছি।’

তদন্ত সূত্র বলছে, এই চক্র পাঁচ বছর ধরে পাঁচ শতাধিক মানুষকে বোকা বানিয়েছে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে অনেককে নিঃস্ব করেছে। এই চক্রের সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারী জড়িত। এরা প্রতিটি পাসপোর্টের বিপরীতে ২২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ম্যানপাওয়ার ও নিরাপত্তা কার্ড দিয়ে দিতেন। সাধারণ মানুষকে এই আসল কার্ডসহ পাসপোর্ট দিয়ে চক্রের সদস্যরা নির্দিষ্ট পরিমাণ ইউরো এনডোর্স করিয়ে নিত। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে মামুন নিখুঁতভাবে ভিসা বানানোর কাজটি করে। জাকারিয়া ও জুয়েল ক্লায়েন্ট ধরে আনে এবং মাহবুব কনসালটেন্সি করে।

সর্বশেষ খবর