বুধবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
জাতিসংঘে মুক্ত আলোচনায় তথ্য

যৌন লালসা থেকে ৬ বছরের রোহিঙ্গা শিশুও রেহাই পায়নি

প্রতিদিন ডেস্ক

‘ছয় বছরের শিশুও রেহাই পায়নি মিয়ানমারের সামরিক জান্তার যৌন লালসা থেকে। সে এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য-যা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের জন্য হৃদয় ভেঙে যাওয়ার নামাবলি। আর এমন পরিস্থিতির অবতারণা হয়েছে মিয়ানমারের  রাখাইন প্রদেশে। ভিকটিমদের দোষ একটাই— তারা রোহিঙ্গা।’ জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের এক মুক্ত আলোচনায় এমন তথ্য উপস্থাপন করেন ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা’ বিষয়ক এনজিও ওয়ার্কিং গ্রুপের পক্ষে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি রাজিয়া সুলতানা। খবর এনআরবি নিউজের। ‘আমি তেমন একটি স্থান থেকে এখানে এসেছি, যেখানে নারী-শিশু কেউই গণধর্ষণ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। বর্বরোচিত আচরণের পাশাপাশি হত্যা এবং নির্যাতন চালাচ্ছে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী’— উল্লেখ করেন রাজিয়া সুলতানা।  নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে সোমবার ‘নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার মাধ্যমে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধ শীর্ষক এ মুক্ত আলোচনায় সুলতানা নিরাপত্তা পরিষদসহ জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে। তাহলে মানবতা বিপর্যয়ের রোমহর্ষক ঘটনাবলির অনেক কিছুই তারা জানতে পারবেন উল্লেখ করে রাজিয়া বলেন, ‘গত আগস্ট থেকে ৬ লাখ ৭০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা প্রাণ-সম্ভ্রম বাঁচাতে ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। রোয়ান্ডা গণহত্যার পর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আর কেউ দেখেনি। অথচ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এখন পর্যন্ত যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়নি। বলা যেতে পারে, নিরাপত্তা পরিষদ আমাদের হতাশ করেছে। ২০১২ সালের সতর্কতাকে জাতিসংঘ যদি কঠোর দৃষ্টিতে গ্রহণ করত, তাহলে হয়তো এমন বর্বরতার ভিকটিম হতে হতো না।’

 নিজের অনুসন্ধান-গবেষণার মধ্য দিয়ে রাখাইন প্রদেশের ১৭ গ্রামের ৩০০ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে নিশ্চিত রাজিয়া বলেন, ‘সরকারি বাহিনী এহেন বর্বরতা চালিয়েছে। ধর্ষণ করেছে, ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করেছে অনেক নারীকে।’ রাজিয়া বলেন, কমপক্ষে ৩৫০টি গ্রামে হামলা করে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী’। ‘কালক্ষেপণ না করে মিয়ানমার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সোপর্দ করা উচিত— দাবি রাজিয়া সুলতানার। জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব আমিনা মোহাম্মদ এবং ‘সংঘাতময় পরিস্থিতিতে যৌন সহিংসতা’ বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা প্যাটেনও বক্তব্য রাখেন। উল্লেখ্য, এ মাসেই নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে যাবে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনসহ বিস্তারিত জানতে। প্রমিলা প্যাটেন বলেন, ‘এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাস্তবে যা ঘটছে, তার চিত্র নথিতে পাচ্ছি না। এ জন্য সরেজমিন গিয়ে ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলা জরুরি। এহেন পরিস্থিতির অবসান তথা রোহিঙ্গাদের সসম্মানে নিজের বসতভিটায় ফিরতে কার্যকর একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রমিলা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘শত শত শিশু-নারীকে অপহরণ করে দিনের পর দিন ধর্ষণ করছে বোকো হারাম অথবা আইএসআইএলের সন্ত্রাসীরা। আজ অবধি একজনকে আদালতে সোপর্দ করা সম্ভব হয়নি। আমরা শুধু কথা বলছি, সমালোচনা করছি, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না’। যৌন হামলার শিকার নারী-পুরুষের করুণ কাহিনীর অবতারণা করে বাংলাদেশের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফুল ইসলাম এ সময় বলেন, ‘সংঘাতময় পরিস্থিতিতে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে যদি সংশ্লিষ্ট দেশ এগিয়ে না আসে তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকেই দায়িত্ব নিতে হবে’। রোহিঙ্গা প্রতিনিধি রাজিয়া সুলতানাকে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বাংলাদেশের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, ‘আমরা ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে ‘নারী শান্তি ও নিরাপত্তা’ বিষয়ক মুক্ত বিতর্কে অংশে নিয়ে এই পরিষদে রোহিঙ্গা নারী ও মেয়েদের কথা বলার সুযোগ দানের বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম। আজ সুলতানা রোহিঙ্গাদের পক্ষে বক্তব্য দিলেন। এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা প্যাটেনকে ধন্যবাদ জানাই।’

সর্বশেষ খবর