শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

লাইনে দাঁড়িয়ে বাসে চড়া

জয়শ্রী ভাদুড়ী

লাইনে দাঁড়িয়ে বাসে চড়া

দুপুর ১২টা। রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচে বাসের অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় দেড়শ মানুষ। গন্তব্য পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে কাঞ্চন সেতু। সূর্যের প্রখর তাপে লাইনে দাঁড়িয়ে ঘেমে ধুয়ে যাচ্ছে শরীর। যারা দেরিতে আসছেন টিকিট সংগ্রহ করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন সারিবদ্ধভাবে। কাউকে বলে বা ঝগড়া করে লাইনে দাঁড়াতে বলতে হচ্ছে না। কুড়ি মিনিট পড়ে বাস এসে দাঁড়ালে কোনো ধরনের হৈ-হাঙ্গামা ছাড়াই সারিবদ্ধভাবে সবাই উঠে পড়েন বাসে। ধাক্কাধাক্কি, মারামারি ছাড়াও যে ভদ্রভাবে বাসে ওঠা যায় তার  উদাহরণ রাজধানীতেই অসংখ্য। কিন্তু রাজধানীতে চলাচলকারী অধিকাংশ যাত্রীবাহী বাসই মানে না স্টপেজের নিয়ম। ফলে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করানোয় রাস্তাঘাটে তৈরি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা, ঘটছে দুর্ঘটনা। তবে নির্ধারিত জায়গায় স্টপেজ, টিকিট সিস্টেম এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লাইনে দাঁড়ানোর বিষয় নির্ধারণ করলে তা সুষ্ঠুভাবে মেনে চলছেন যাত্রীরা।  কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন সেতু হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতাগামী (গাউছিয়া) যাত্রীদের জন্য ছয়টি আর্টিকুলেটেড বাস চালু করেছে বিআরটিসি। আধাঘণ্টা পর পর বাস এসে দাঁড়ায় কুড়িলে। বাস আসার আগে নির্ধারিত স্টপেজে যাত্রীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। রাজধানীর বেশ কয়েকটি রুটে চলাচলকারী ঢাকা চাকা এর আরেকটি উদাহরণ। রাজধানীর নতুনবাজার রুটে প্রতিদিন সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে দফায় দফায় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনে বাসের অপেক্ষায় থাকেন গুলশান-২ এবং বনানী-কাকলীগামী যাত্রীরা। বাস এলে সারিবদ্ধভাবে উঠে যান গাড়িতে। আসন পূর্ণ হলে যাত্রীরা টিকিট হাতে অপেক্ষা করতে থাকেন পরের বাস আসার

অপেক্ষায়। একই অবস্থা তেজগাঁও-গুলশান লিঙ্ক রোডের নাভানা মোড় থেকে শুরু হয়ে গুলশান শুটিং ক্লাব, গুলশান-১ ও রূপায়ণ টাওয়ার হয়ে গুলশান-২ নম্বরগামী যাত্রীদের। বাসের ভাড়া নির্ধারিত থাকায় বাসের হেলপারদের সঙ্গে কখনোই ঝামেলায় জড়াতে দেখা যায় না যাত্রীদের। কিন্তু এই ভাড়া নির্ধারণ না থাকায় সিটিং আর লোকাল ভাড়া নিয়ে প্রতিনিয়ত হাতাহাতি চোখে পড়ে রাজধানীতে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসগুলোতে। ঢাকা চাকার নতুনবাজার থেকে কাকলী রুটের নিয়মিত যাত্রী আল-আমীন হোসেন বলেন, সকালে অফিসে যাওয়ার সময় বেশ খানিকক্ষণ বাসের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়। তবে এতে আমি একটুকুও বিরক্ত নই। অন্তত ঝুঁকি নিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে বাস ধরতে হয় না। আমি প্রয়োজনে আধা ঘণ্টা দাঁড়াতে রাজি আছি কিন্তু ধাক্কাধাক্কি করে রাস্তায় পড়ে আহত হওয়ার পক্ষে নই।

ধানমন্ডি রাপা প্লাজা পার হলেই দেখা যায় ভিআইপি-৩৭ নম্বর বাসের টিকিট কাউন্টার। বাসের জন্য আগে থেকেই টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন যাত্রীরা। বাস এসে নির্ধারিত জায়গায় দাঁড়ালে সিরিয়াল অনুযায়ী ফাঁকা সিটে বসেন যাত্রীরা। গত বুধবার হাতিরঝিলের গুলশান পুলিশ বক্সের সামনে গিয়ে দেখা গেল একই চিত্র। বাসের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা। লাইনে দাঁড়াতে কাউকে বলতেও হচ্ছে না। একজনের পেছনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন আরেকজন। এভাবে পাঁচ মিনিট পার হতেই বাস এলো। ধীরলয়ে বাসে উঠে গেলেন যাত্রীরা। সবার ওঠা শেষ হলে হেলপার দরজা লাগিয়ে দিলে চলতে শুরু করল বাস। বাসের যাত্রী মৃদুল রহমান বলেন, আমি এই পথের নিয়মিত যাত্রী। ধাক্কাধাক্কি এড়াতে এবং হাতিরঝিলে নির্মল বাতাস পেতে এই পথেই যাতায়াত করি। আমার মনে হয় গণপরিবহনে সুশৃঙ্খলা ফেরাতে নির্ধারিত স্টপেজ, নির্দিষ্ট ভাড়া এবং সারিবদ্ধভাবে বাসে ওঠার বিকল্প নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর