রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বিদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিয়ানমার সরকারের পাশবিক নির্যাতনের মুখে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া নতুন ও পুরনো আড়াই লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর হাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকার কথা জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম বিএসসি। ওই রোহিঙ্গারা রেমিট্যান্সও মিয়ানমারে পাঠাচ্ছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের আর্থিক প্রণোদনা দিলে রেমিট্যান্স বৈধ পথে আসবে। এমন একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে করেছি। প্রবাসীদের যে কোনো সমস্যা সমাধানে তাদের মন্ত্রীর কাছে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি যদি মানুষের কথা না শুনি, তাহলে আমি কীসের মন্ত্রী? মন্ত্রী রাজা নন। মন্ত্রী মানুষের চাকর। দেশের চাকর।

গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্স বাংলাদেশি— এনআরবি’স আয়োজিত ‘এসো গড়ি মাতৃভূমি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংস্থার চেয়ারম্যান এম এস সেকিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে ওই সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমার, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. আল রাজি, নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ প্রমুখ। সেমিনারে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে না বলে রোহিঙ্গারা চলে যাচ্ছেন। আমাদের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তারা বিদেশে যাচ্ছেন। আমার তো মনে হয়, ইতিমধ্যে দুই থেকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, রোহিঙ্গারা কীভাবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেলেন? ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে নাগরিক সনদপত্র নেওয়া হয়। এই সনদ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) গ্রহণ করি আমরা বাংলাদেশিরা। কিন্তু রোহিঙ্গাদের এনআইডি কার্ডটা দিল কে? রোহিঙ্গারা কী করে জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়ে বিভিন্ন দেশে গিয়ে অপরাধ করে বাংলাদেশের পাসপোর্ট দেখিয়ে আমাদের যন্ত্রণায় ফেলছেন? কে দিয়েছে? নিচের পর্যায়ে আমরাই (ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান) দিচ্ছি। কিন্তু এটার দোষটা সরকারের ওপর এসেছে। সরকার কী করবে? এখন নিচের স্তরে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও চেয়ারম্যানরা যদি দিয়ে দেন, তাহলে আমরা করব কী? আমরা তো এটাকে না করতে পারি না। তিনি নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, আমি একবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে দেখি সবাই চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলছেন। আমি একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার বাড়ি কোথায়? জবাবে সে বলেছে, তার বাড়ি মংডু। অর্থাৎ রোহিঙ্গারা বাঙালি হিসেবে সেখানে অপকর্ম করছেন। অথচ লোকগুলো বাংলাদেশি নয় এবং রোহিঙ্গারা রেমিট্যান্সের অর্থ পাঠাচ্ছেন মিয়ানমারে। বাংলাদেশ একটা পয়সাও পাচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে সিডনিতে যত প্রকার অপকর্ম আছে, তা তারা করছে। সুতরাং এই যে প্রবণতা, এটা তো আমরা সৃষ্টি করেছি, এটা অবশ্যই রোধ করতে হবে। বৈধ চ্যানেলে দেশে রেমিট্যান্স আনতে একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর তথ্য উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বেসরকারিভাবে রেমিট্যান্স পাঠালে, এক থেকে দুই টাকা বেশি পাওয়া যায়। তাহলে কোন পাগলে পেয়েছে যে— এ দুই টাকা নষ্ট করে দেশে অফিশিয়াল (বৈধ পথে) টাকা পাঠাবে? এজন্য আমি প্রস্তাব করেছি, যে টাকা প্রবাসীরা বেশি পান, রেমিট্যান্সের সেই টাকাটা সরকার প্রণোদনা হিসেবে দেবে। তাহলে রেমিট্যান্স বৈধ পথে আসবে। আশা করছি, এটা গ্রহণ করা হবে। তবে এটা গ্রহণ করা না হলে, বৈধ পথে টাকা আসবে না। প্রবাসী শ্রমিকদের প্রণোদনা দিলে রেমিট্যান্স বৈধ পথে আসবে। প্রবাসীদের যে কোনো সমস্যা সমাধানে তাদের মন্ত্রীর কাছে আসার আহ্বান জানিয়ে মো. নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, আমার রুমে ঢুকতে কোনো অনুমতি লাগে না। আপনি সরাসরি ঢুকে যেতে পারবেন। আর, আমি যদি মানুষের কথা না শুনি, তাহলে আমি কীসের মন্ত্রী? মানুষের কথা না শুনলে, সে মন্ত্রী কীসের? আমাকে মানুষের কথা শুনতে হবে। মানুষের সমস্যা সমাধান করতে হবে। তার দুঃখের শরিক হতে হবে। এটা যখন শুনব, তখন আমি মন্ত্রী। সেমিনারে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আর্থিক অনিয়মসংক্রান্ত বক্তাদের অভিযোগের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এই অনিয়ম কারা করে, সে সম্পর্কিত তথ্য গোপনে আমাকে দিন। একটি চিঠিতে লিখে দিতে পারেন। তাতে আপনার নাম-পরিচয় লিখতে হবে না। আমি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তিনি বলেন, বিশ্বের ১৬৫টি দেশে বাংলাদেশের ১ কোটি ১৭ লাখ প্রবাসী কর্মী কাজ করছেন।

 এ কাজগুলোর সব বিদেশি ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে হয়নি। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে কথা উঠেছে যে, সিন্ডিকেশন করে শ্রমিক যাচ্ছে। হ্যাঁ, সিন্ডিকেশন হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সিন্ডিকেট করেনি। করেছে মালয়েশিয়া। সুতরাং আমি এই সিন্ডিকেশনের যথেষ্ট প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু এটা (সিন্ডিকেশন) যদি আটকে দেওয়া হয়, তাহলে যারা যাচ্ছেন, তারাও যেতে পারবেন না। সেজন্য বুদ্ধিমানের কাজ হিসেবে চুপচাপ আছি। তবে সুযোগ পেলে এটাকে (সিন্ডিকেট) ধরার চেষ্টা করব।

সেমিনারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বিমানবন্দরে শ্রমিকরা যে ব্যবহারের সম্মুখীন হচ্ছেন, এখানে যে মানসিক ঘাটতি আছে, তা দূর করতে হবে। তার মতে, উন্নয়নশীল দেশে যেতে প্রবৃদ্ধির নতুন চালক প্রয়োজন। এতে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ জরুরি। এখন প্রবৃদ্ধি আছে, কিন্তু কর্মসংস্থানে ঘাটতি আছে। আমরা সুষম উন্নয়ন চাই। আগামীতে প্রবৃদ্ধির নতুন চালক হিসেবে কৃষি খাতকে দেখার সুযোগ আছে।

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দু এখন জনশক্তি রপ্তানি খাত। এটা বন্ধ করা দরকার। এ খাতের সিন্ডিকেট দূর করতে হবে।

এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বিদেশে অদক্ষ শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করা উচিত। একই সঙ্গে স্যুট-টাই পরে যেসব বাংলাদেশি উন্নত বিশ্বে আছেন, তাদের দেশে আনার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারম্যান এম এস সেকিল চৌধুরী বলেন, আমাদের উচ্চ ও নিম্ন দুই স্তরের দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে হবে।

সর্বশেষ খবর