রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
উদ্ভাবন

আর্সেনিক মুক্ত ফিল্টার

মাহবুবুল হক পোলেন, মেহেরপুর

আর্সেনিক মুক্ত ফিল্টার

মেহেরপুর জেলা শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরের উজ্জলপুর গ্রাম। যে গ্রামটিতে নিরাপদ পানি যেন দুষ্প্রাপ্য। অধিকাংশ বাড়ির টিউবওয়েলে রয়েছে আয়রণ ও আর্সেনিক। গ্রামের চার রাস্তার মোড়ে সেভ দি চিলড্রেনের বসানো আর্সেনিক রিমুভ্যাল প্লান্ট। অর্থের বিনিময়ে সেখান থেকে গ্রামের দুস্থ মানুষ পানি নিতে পারে না। বাধ্য হয়ে এক কিলোমিটার দূরে কৃষিব্যাংক পাড়া থেকে পানি সংগ্রহ করে তারা। গ্রামের মানুষের ভোগান্তি দেখে মোমিনুল ইসলাম আবিষ্কার করেন দূষণমুক্ত পানির ফিল্টার। সদর উপজেলার উজ্জলপুর শাহজীপাড়ার লুত্ফর রহমানের বড় ছেলে মোমিনুল ইসলাম। ২০১৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর থেকে গবেষণা শুরু করেন কীভাবে আর্সেনিকমুক্ত পানির ফিল্টার আবিষ্কার করা যায়। মোমিনুল জানান, ফিল্টারের প্রটোটাইপটি তৈরি করতে একটি টিনের ড্রাম ব্যবহার করা হয়েছে। ড্রামের মাঝখানে একটি ফিল্টার বসানো হয়েছে। তবে এতে বিদ্যুৎ ও কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়নি। মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কৃত্রিম শক্তিতে রূপান্তর করে কাজ করা হয় ফিল্টারটিতে। ফিল্টারের মধ্যে বালি ও কাঠ কয়লা নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্যবহার করা হয়েছে। ফিল্টারেশনের কারণে পানিতে যে ময়লা জমা হয় তা একটি পাইপের মাধ্যমে ওপর দিয়ে বের হয়ে ডাস্ট পটে জমা হয়। তার পাশেই রয়েছে নিরাপদ পানি বের হওয়ার পাইপ। যার মাথায় দুটি সুইচ ব্যবহার করা হয়েছে। সুইচের মাধ্যমে পানির প্রবাহকে বাড়ানো-কমানো যায়। একটি বড় পরিবারের রান্না ও খাবার পানির পরিপূর্ণ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম ফিল্টারটি। আয়রন ও অন্যান্য কারণে ফিল্টারটি কখনই বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। পানি শেষ হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে টিউন সিগন্যাল দেবে ফিল্টারটি। আর্সেনিকের পাশাপাশি আয়রণ, ম্যাঙ্গানিজ, টারবেডিটি, রং দুর্গন্ধসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান ও ব্যাক্টেরিয়া দূর করতে সক্ষম ফিল্টারটি। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে ফিল্টারটি জনসাধারণের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। প্যাটেন্ট অনুমোদন হলে বাজারজাত করা সম্ভব হবে। ঝিনাইদহ জেলার আঞ্চলিক পানি গবেষণাগারে উদ্ভাবিত ফিল্টার ও প্রতিবেশীদের পানি পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, নলকূপের পানিতে প্রতি লিটারে আর্সেনিকের মাত্রা ০.৩৯৬ মিলিগ্রাম, আয়রন ১৩.০৬ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ১.০২ মিলিগ্রাম রয়েছে। ফিল্টার করার পরে ওই পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা ০.০৬৯ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৭৪ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.০৫ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়। পরবর্তীতে প্রটোটাইপটি কিছুটা উন্নত করা হলে ওই আর্সেনিকের মাত্রা ০.৩৯৬ থেকে ০.০০৯ মিলিগ্রাম, আয়রন ১৩.০৬ থেকে ০.০০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়। আর্সেনিক ও অন্যান্য সমস্যা দূরীকরণে এমন একটি ফিল্টার খুবই প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে সরকারি, বেসরকারি ও দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলোর সহযোগিতায় পানি দূষণমুক্ত করে সব শ্রেণির মানুষের সহজপ্রাপ্য করতে চায় মোমিনুল। এই ফিল্টার ২৪ ঘণ্টায় ৯০ লিটার পানি দূষণমুক্ত করতে পারে। মেহেরপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল গফফার মোল্লা জানান, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। ফিল্টারটি বাজারজাত করা গেলে মানুষ উপকৃত হবে। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করব। জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ বলেন, ইতিমধ্যে তার ফিল্টার নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ফিল্টারটি বাজারজাত করতে তার কিছু অর্থ সহযোগিতা লাগবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার ফিল্টারটি বাজারজাতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর