শনিবার, ১২ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

যৌনসন্ত্রাসকে সন্ত্রাস গণ্য করতে হবে

গণকনভেনশনে ৯ দফা সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্প্রতি দেশে যৌনসন্ত্রাসীদের তৎপরতা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার এখনই সময়। ধর্ষণ, যৌননিপীড়ন ও যৌনতা বিষয়ে সংঘটিত অপরাধগুলোকে এখন যৌনসন্ত্রাস বলা হচ্ছে। এটি নতুন ধরনের একটি শব্দ। আর এ ধরনের অপরাধকাণ্ডকে সন্ত্রাসকর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সমাজ থেকে এমন ধরনের অপরাধ উঠে যাবে। এজন্য চাই নির্দিষ্ট আইন, সচেতনতা সৃষ্টি ও অপরাধীদের কঠোর শাস্তি। গতকাল সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে যৌনসন্ত্রাসবিরোধী গণকনভেনশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে গণকনভেনশনের আহ্বায়ক ও অনুষ্ঠানটির সভাপতি ডা. লেনিন চৌধুরী ‘যৌনসন্ত্রাস : সংকট ও উত্তরণ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে তিনি যৌনসন্ত্রাসী প্রতিরোধের জন্য নয়টি সুপারিশও তুলে ধরেন।

সুপারিশগুলো হলো : ‘যৌনসন্ত্রাসবিরোধী এবং নির্মূল আইন’ নামে আইন প্রণয়ন করতে হবে। যৌনসন্ত্রাসের মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফিলতি হলে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জেন্ডারসমতা বিষয়ে পাঠদানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয় সরকার ও তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলকভাবে এর বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়তে হবে। পুরুষদের যৌনসন্ত্রাসবিরোধী সচেতনতা তৈরিতে উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারে অংশ নিতে হবে। সাধারণ নাগরিকের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বিশেষ ক্যাম্পেইন কার্যক্রম তৈরি করতে হবে। এজন্য গণমাধ্যমকে সহায়ক ভূমিকা রাখতে হবে। যৌনসন্ত্রাসবিরোধী প্রচার কার্যক্রমে ভুক্তভোগীকে নয়, অভিযুক্তকে সবার সামনে তুলে ধরার নীতি গ্রহণ করতে হবে। বিকৃতকামীদের চিকিৎসায় প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিতে হবে। আর পর্নোগ্রাফি ও যৌন উত্তেজক সামগ্রীর সহজলভ্যতা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিচারপতি জিনাত আরা বলেন, ‘আমাদের দেশে ধর্ষণের প্রচুর মিথ্যা মামলা হয়। আবার আইনগত কারণে অনেক ধর্ষণ মামলার বিচারও হয় না। নারী নির্যাতন বন্ধে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। নারী ধর্ষণ, নিপীড়ন বিষয়ে আইন সবাইকে জানাতে হবে।’

গণকনভেনশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘ধর্ষণসহ বেশির ভাগ অপরাধকে প্রশ্রয় দেয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল। কেননা এ ধরনের অপরাধে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধী ক্ষমতাসীন দলের কোনো ছাত্র সংগঠনের নেতা হয়। তারা অপরাধ করেও ভয় পায় না। এ থেকে বের হয়ে আসতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। আর এ ধরনের গণকনভেনশনই হতে পারে তেমন একটি প্লাটফরম।’

মানবাধিকারকর্মী অধ্যাপক নাসিম আখতার হুসাইন বলেন, ‘নারীকে আর দুর্বল ভাবার সুযোগ নেই। এখন ঘরে স্ত্রীরা এবং ঘরের বাইরে নারীরা সম্মান পাচ্ছে। নির্যাতনকারী পুরুষরা পিছু হটছে। আমরা চাই গণকনভেনশনের মাধ্যমে এই বার্তা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে। এতে যৌনসন্ত্রাসীরা ভয় পাবে।’ নিজেরা করির সমন্বয়ক মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, ‘যৌনসন্ত্রাস বন্ধের জন্য সমাজে ব্যাপকভাবে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সমগ্র দেশে বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন সেক্টরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে এই সচেতনতা তৈরি করতে হবে। পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে নারীবান্ধব মানসিকতা তৈরিতে অনেক প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে যৌনসন্ত্রাস প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন করে তার যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।’ এ ছাড়া অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক, সামাজিক, মানবাধিকারকর্মী, বিভিন্ন পেশাজীবী নারী, শিক্ষার্থীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর