শনিবার, ১২ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাদক নির্মূলে ক্রাশ প্রোগ্রাম

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা এঁকেছে বিশেষ ছক

সাখাওয়াত কাওসার

মাদক নির্মূলে শুরু হচ্ছে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম। তবে এরই মাঝে বিশেষ তৎপরতা শুরু হয়েছে র‌্যাব-পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ সব আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার। ‘জঙ্গিবাদ দমনের মতো মাদক নির্মূলেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে’— সম্প্রতি র‌্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দরবারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার পরই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নড়েচড়ে বসেছে। এরই মধ্যে গত বুধবার খিলগাঁও এলাকায় ডিবির সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে লেনিন বাবু নামের এক মাদক ব্যবসায়ী। অন্যান্য সংস্থাও মাদক নির্মূলে এঁকেছে বিশেষ ছক। গত ৪ মে থেকে গত বুধবার বেলা ২টা পর্যন্ত ৯৩৮ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এর মধ্যে ১৫০ জন মাদক ব্যবসায়ী। বাকি ৭৮৮ জন সেবনকারী। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে র‌্যাবের প্রায় সবকটি ব্যাটালিয়নের একাধিক টিম এসব অভিযান পরিচালনা করে। মাদক বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়ছে ৭৯টি। শিগগিরই র‌্যাবের অভিযানে তীব্রতা বাড়ছে। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, মাদকের সঙ্গে অনেক অপরাধই জড়িত। এর বিরুদ্ধে আমরা আগেও সিরিয়াস ছিলাম। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। স্টেপ বাই স্টেপ এই অভিযান চলবে। মাদকসেবী ও খুচরা বিক্রেতাদের এখন ধরা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের সাজা দেওয়া হচ্ছে। পর‌্যায়ক্রমে মাদক ব্যবসায়ী এবং যেসব এলাকা দিয়ে দেশে মাদক প্রবেশ করছে সেসব এলাকায় অভিযান জোরদার করা হবে।

গত বুধবার ভোররাতে খিলগাঁও থানাধীন আমুলিয়ায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে লেনিন বাবু নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ডিবি বলছে, ১৯ এপ্রিল রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় ইয়াবার চালান ধরতে গিয়ে মাদক চোরাকারবারিদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির ঘটনার মূল সন্দেহভাজন ছিলেন লেনিন বাবু।

ডিবির (পূর্ব) উপকমিশনার খোন্দকার নূরুন্নবী বলেন, আসছে রমজানে নিরাপত্তা সংক্রান্ত অভিযানের ক্ষীপ্রতা বড়ানো হবে। অভিযানের ক্ষেত্রে আরও নতুন নতুন কৌশল নিয়ে আসা হচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সবসময়ই চলে। বর্তমান আইজিপি দায়িত্ব নেওয়ার সময়ই তাকে মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এটা আমরা জেনেছি কমিশনারের মাধ্যমে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি) সূত্র বলছে, ২৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বিশেষ অভিযানের ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তখন থেকে কিছুটা গতি এলেও গত ৩ মের পর থেকে রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে ডিএনসি। ডিএনসির প্রধান কার্যালয় থেকে বিভাগীয় প্রধানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তার অধীনস্থ প্রতিটি ইউনিটে প্রতি ১৫ দিনের মধ্যে অন্তত ৩ দিন ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালানোর জন্য। এই নির্দেশনার আওতায় থাকছেন ওয়্যার হাউসগুলোতে কর্মরতরাও। কর্মকর্তারা মাসে অন্তত দুটি মামলার তদন্ত করবেন। বিশেষ অভিযানের খুঁটিনাটি ডিএনসির প্রধান কার্যালয়কে অবহিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টি মনিটরিং করছে মন্ত্রণালয়। সূত্র বলছে, সারা দেশে এখন ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ ইয়াবা সেবন করে। অন্যান্য মাদকের চেয়ে ইয়াবার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। মাদক হিসেবে ইয়াবার পরের অবস্থান ফেনসিডিলের। মাঝখানে ফেনসিডিলের চাহিদা কমে গেলেও নতুন করে আবারও ফেনসিডিলের ব্যবহার বেড়েছে। ইয়াবা এবং ফেনসিডিল— এই দুটি মাদকই  আসে পার্শ্ববর্তী দুই দেশ মিয়ানমার ও ভারত থেকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসার একমাত্র রুট হলো চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার। আর ভারত থেকে  ফেনসিডিল প্রবেশ করে দিনাজপুরের হিলি, যশোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফেনি, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত দিয়ে। এসব এলাকায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করতে পারলে মাদক ঢোকা অনেকটা কমে যাবে। মাদকের সরবরাহ কমে গেলে সেবনও কমে যাবে অনেকাংশে। তবে লোক দেখানো অভিযান বন্ধ না করলে মাদকের ভয়াবহতা কখনো কমবে না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা ও অপারেশন) নজরুল ইসলাম শিকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর অনেক সফলতা এসেছে। তালিকা ধরে চিরুনি অভিযান চালানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সফলতাও তুলনামূলক ভালো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও অপরাধ বিজ্ঞানী শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, মাদক সবচেয়ে বড় সামাজিক বিপদ। মাদক ব্যবসা এবং বিক্রিতে প্রভাবশালী মহলসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের লোকজন জড়িত। হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা এই মাদকে। জায়গামতো চলে যাচ্ছে এর ভাগ। মাদক একেবারে নির্মূল করা সম্ভব নয়। এরপরও ৫০ থেকে ৬০ ভাগ কমিয়ে আনতে দরকার ‘সাচ্চা জিহাদ’। দেশের সব মাদকসেবীকে যদি আমরা ধরে ধরে জেলে ঢুকাই তাহলে তো জেলেও জায়গা হবে না। তাদের কাছে সরবরাহটা বন্ধ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর