শিরোনাম
শনিবার, ১২ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
আসছে রমজান

অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

মোস্তফা কাজল

রমজানকে কেন্দ্র করে অস্থির রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার। পণ্যের দাম শুনে হতবাক ক্রেতারা। সবজি থেকে শুরু করে মাছ, মাংস ও পিয়াজের দাম বাড়ছেই। এসব পণ্যের দাম কেজি ও লিটারে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পাকিস্তানি মুরগির দাম। গত সপ্তাহে এ পণ্যটি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৩০ টাকায়। গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকায়। এ ছাড়া বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি বিক্রি হচ্ছে না। এসবের পাশাপাশি সক্রিয় অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও কোনো কারণ ছাড়াই দাম বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমেছে চক্রটি। ফলে বাড়তে শুরু করেছে রমজাননির্ভর প্রতিটি পণ্যের দর। এর মধ্যে পিয়াজ ও বেগুন অন্যতম। গত বছর প্রতি কেজি ১০০ টাকায় উঠে গিয়েছিল পিয়াজের দর। এবারও রমজানের আগেই পণ্য দুটির দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এ ছাড়া  উত্তাপ ছড়াচ্ছে চিনি, ডাল ও আদা। বিক্রেতারা বলছেন, হঠাৎ করে চাহিদা বাড়ায় ঘাটতি পড়েছে জোগানে। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজার কারসাজির মাধ্যমেই জিম্মি করা হচ্ছে সাধারণ  ক্রেতাদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজান মাসে পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও রমজানের আর চার দিন বাকি। অথচ এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না। তারা বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশে রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম কমে। কিন্তু আমাদের দেশে রমজান মানেই ব্যবসায়ীদের জন্য বাড়তি মুনাফা আয়ের সময়। রমজান উপলক্ষে টিসিবির বিক্রি করা পণ্যের মান ভালো না হলেও বাজারের সঙ্গে সংস্থাটির দামের কোনো ফারাক নেই। এতে অবিবেচক ক্রেতারা ঠকছে।  সরেজমিন দেখা গেছে, মাসের ব্যবধানে ছোলার দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। দাম বেড়েছে আদারও। কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে আদার দর। কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা বলেন, গত সপ্তাহে পিয়াজ প্রতি কেজি ৩২ থেকে ৩৩ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পিয়াজের পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে ৭ থেকে ৮ টাকা। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা দরে। ভারত থেকে আমদানিকৃত পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩২ টাকায়। আর খুচরা বাজারে দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। এ ছাড়া আদা ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা ও রসুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ানবাজার বণিক সমিতির সহসভাপতি আরশাদ উদ্দিন বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর পিয়াজের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তার দাবি, দেশে এবার ফলন ভালো হওয়ায় এবং আমদানিকারকদের পিয়াজ পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় রমজানে পিয়াজের দাম আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই। এদিকে ছোলা, ডাল ও চিনির দাম বাজার ভেদে ভিন্নতা দেখা যায়। বাজারে ছোলা প্রতি কেজি ৮০-৮২ টাকায়, মসুর ডাল ৭০-৭৫ টাকায় এবং চিনি ৫৬ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার কোনো বাজারে ছোলার দাম উঠেছে ৯০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া স্বাভাবিকভাবে বাজারে ৬৫ থেকে ৭০ টাকার ছোলা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। অর্থাৎ মানভেদে কেজি প্রতি ছোলার দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। রমজান মাসে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুর। রমজানে দাম বাড়বে না বলে দাবি করছেন পাইকাররা। প্রতি কার্টন (১০ কেজি) দুবাইয়ের খেজুর ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের রমজানে ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এদিকে রমজান উপলক্ষে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ১৮৪টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ বিপণন কেন্দ্র-টিসিবি চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, ছোলা ও খেজুর বিক্রি শুরু করেছে। এর মধ্যে সয়াবিন তেল ৮৫ টাকা লিটার, চিনি (দেশি) ৫৫ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা, মসুর ডাল (মাঝারি সাইজ) ৫৫ টাকা ও খেজুর ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। কিন্তু টিসিবির পণ্যের মান ভালো না হলেও বাজারের সঙ্গে সংস্থাটির দামের কোনো ফারাক নেই।

সর্বশেষ খবর