সোমবার, ১৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

গণপরিবহনে যৌন হয়রানি আতঙ্ক

বাধ্যতামূলক হচ্ছে গাড়িতে ৯৯৯ লিখে রাখা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

গণপরিবহনে যৌন হয়রানি আতঙ্ক

ফার্মগেট থেকে নতুনবাজার যাওয়ার উদ্দেশে দেওয়ান পরিবহনের বাসে উঠেছেন তানিয়া আহমেদ। মধ্য বাড্ডা পার হওয়ার পর যাত্রীসংখ্যা কমে মাত্র চারজনে নেমে আসে। দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকাই ছিল। হঠাৎ বাসের সাউন্ডবক্সে জোরে গান বাজিয়ে গাড়ির হেলপার এসে তানিয়ার পাশে বসে। পুরো গাড়ি ফাঁকা অথচ অন্য সিটে না বসে এ সিটে বসার কারণ জানতে চাইলে অশ্লীল মন্তব্য করে হেলপার। এ সময় ধমকে উঠলে হেলপার উঠে গিয়ে ড্রাইভারের সিটে বসে আর ড্রাইভার বসে এই নারীর সিটে। এ সময় তানিয়া বাস থেকে নেমে যেতে চাইলে বাসের গতি বাড়িয়ে মাঝ রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে তারা। বাস না থামালে লাফ দেবে এমন হুমকি দিলে গতি কিছুটা কমাতেই লাফ দিয়ে রাস্তায় পড়ে যান তানিয়া। এ ঘটনাগুলো প্রতিনিয়তই ঘটছে। রাজধানীসহ পুরো দেশের গণপরিবহনে যৌন হয়রানি ভয়াবহ আতঙ্ক আকারে দেখা দিয়েছে।

গণপরিবহনে যৌন হয়রানি বন্ধে গাড়িতে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে গাড়ির নম্বর এবং জরুরি সেবা সার্ভিস ৯৯৯ লিখে রাখা।

১৮ মার্চ বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত ‘নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশের গণপরিবহনে যাতায়াতে ৯৪ শতাংশ নারী কোনো না কোনো সময় যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আর ৬৬ শতাংশ নারী ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হন। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ, পরিবহনে অতিরিক্ত ভিড়, যানবাহনে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ বাতি না থাকা এবং তদারকির অভাবে নারীদের প্রতি এই যৌন হয়রানি হচ্ছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

গবেষণায় বলা হয়, দুটি বিষয় সামনে রেখে ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে জুন তিন মাস এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। প্রথমত, রাস্তায় ও গণপরিবহনে যৌন হয়রানির পরিবেশ নির্মূল করা যায় কীভাবে, দ্বিতীয়ত, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করার মাধ্যমে নারীর নিরাপদ চলাচলের পরিবেশ নিশ্চিত করা। নগর, উপ-নগর এবং গ্রামাঞ্চলের নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের পরিবারের নারীদের যাতায়াতের ভিত্তিতে ৪১৫ জন নারীকে গবেষণায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়তই উঠে আসছে গণপরিবহনে যৌন হয়রানির ভয়াবহ চিত্র। গত বছর ২৫ আগস্ট চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর এক তরুণীকে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুরে লাশ ফেলে যায় চালক ও তার সহকারীরা। ২১ এপ্রিল উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে বাসের ভিতর যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। পরে তুরাগ পরিবহনের বাসের চালক, হেলপারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ৫ মে চট্টগ্রামে বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে বাসে চালক ও সহকারী যৌন হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই বাসের চালক এবং তার সহকারীকে ধরে পুলিশে দেন শিক্ষার্থীরা। ১০ মে ঢাকার শ্যামলীতে আরেকটি বাসে যৌন হয়রানির শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা চালকের সহকারীকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। যৌন হয়রানির আতঙ্ক রুখতে বাসের ভিতর ৯৯৯ লিখে রাখা বাধ্যতামূলক করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। পাশাপাশি বাসের ভিতরই লেখা থাকবে গাড়ির নম্বর, যাতে ভুক্তভোগী যাত্রী জরুরি সেবা সার্ভিস ৯৯৯-এ ফোন করে বাসের নম্বর বললে দ্রুত বাসটিকে শনাক্ত করা যায়। এ ব্যাপারে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘গণপরিবহনে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে যৌন হয়রানির ঘটনা। আমরা অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাই। এসব অপকর্ম রুখতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

সর্বশেষ খবর