শিরোনাম
শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিদেশ ভ্রমণের স্বাদ দেশেই

ধরন বদলাচ্ছে পর্যটনের

জিন্নাতুন নূর

বিদেশ ভ্রমণের স্বাদ দেশেই

কায়াকিং, স্নোরকেলিং, ক্যাম্পিং, জিপ লাইনিং, অফ রোড সাইক্লিনিং, ট্র্যাকিং, প্যারাসেইলিং, ডিনার ক্রুজ, লাইভ বার-বি-কিউ ক্যাম্পেইন এবং ফরেস্ট ট্রেকিং শব্দগুলো দেশের পর্যটকদের কাছে নতুন। কিন্তু ভ্রমণ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যারা  খোঁজখবর রাখেন তাদের কাছে অপরিচিত নয়। বিদেশি এই ভ্রমণ কার্যক্রমগুলো ইতিমধ্যে দেশীয় পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ভ্রমণে ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতার স্বাদ পেতে বাংলাদেশি ভ্রমণপিয়াসুরা কিছুদিন আগেও দেশের বাইরে গিয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ভ্রমণ কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা নিতেন। তবে সময় পাল্টেছে। দেশীয় পর্যটনকে আকর্ষণীয় করতে তরুণ উদ্যোক্তা ও বেসরকারি ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে রোমাঞ্চে পরিপূর্ণ বিভিন্ন ভ্রমণ কার্যক্রমের ব্যবস্থা করছেন। বিদেশে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ না করে দেশেই সামর্থ্যের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণের স্বাদ পাচ্ছেন বাংলাদেশি পর্যটকরা। সব মিলিয়ে পর্যটনের নতুন এই ধরনের দেশীয় পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করছেন।

চলচ্চিত্র, টিভি পর্দা বা ইন্টারনেটে অন্যদের ‘কায়াকিং’ করতে দেখে বাংলাদেশের ভ্রমণকারীদের ইচ্ছা জাগলেও ব্যবস্থা না থাকায় ভারত, শ্রীলঙ্কায় গিয়ে এর অভিজ্ঞতা নিতে হত। এবার দেশেই সরু ও বিশেষ ধরনের কায়াক নৌকায় প্যাডেল ঘুরিয়ে ভ্রমণকারীরা কায়াকিংয়ের স্বাদ নিতে শুরু করেছেন। যাদের কখনো নৌকা চালানোর অভিজ্ঞতা নেই তারাও চাইলে বিশেষ এই নৌযান চালাতে পারবেন। বর্তমানে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ এবং চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মহামায়া লেক ও রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেকে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা আছে।  রাঙ্গামাটির ‘বেরাইন্যা লেক শোর ক্যাফে সংলগ্ন কাপ্তাই লেকে কায়াকিং প্যাকেজ পরিচালনাকারী ডিসকভারি ট্যুরসের প্রধান রিটন চাকমা জানান, তাদের একটি কায়াক বোটে দুজন মানুষ আধা ঘণ্টা কায়াকিং করতে পারেন। এজন্য খরচ পড়ে দেড়শ টাকা। নিরাপত্তার জন্য সেখানে কায়াকিং করার সময় সেবাগ্রহীতাদের লাইফ জ্যাকেটও দেওয়া হয়ে থাকে। পর্যটকদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখে ও অন্যদের কাছে শুনে রাঙ্গামাটিতে গিয়ে নতুন এই নৌযান চালানোর অভিজ্ঞতা নিচ্ছেন।

দেশীয় পর্যটনকে আকর্ষণীয় করতে নতুন আরেকটি কর্মকাণ্ড হচ্ছে প্যারাসেইলিং। এতে ‘প্যারাসুটে করে একজন মানুষ সাগরের জলরাশির ওপর দিয়ে আকাশে উড়ে বেড়াবেন। এ প্রক্রিয়ায় দ্রুত গতির একটি স্পিডবোটে বাঁধা লম্বা দড়ি প্যারাসুটটিকে সাগরের ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে যাবে। বাতাসের তোড়ে ভ্রমণকারী টেরই পাবেন না যে এক সময় তিনি মাটি থেকে কয়েক শ ফুট উপরে ভেসে বেড়াচ্ছেন। কেউ চাইলে প্যারাসুটে আকাশ থেকে ভাসতে ভাসতে হঠাৎ মাঝ সমুদ্রের পানিতে পা স্পর্শ করাতে পারেন। আর ‘লাইফ টাইম’ এই অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে একজনকে দুই হাজার টাকা খরচ করতে হবে। কক্সবাজারের হিমছড়িতে পর্যটকদের বিনোদন দিতে বর্তমানে বেসরকারি দুয়েকটি সংস্থা প্যারাসেইলিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।  ভ্রমণবিষয়ক চ্যানেল ডিসকভারিতে স্নোরকেলিং করে সাগরের নিচে অজানা জগৎ দেখার স্বপ্ন কত বাংলাদেশি পর্যটকেরই আছে। কিন্তু ব্যবস্থা না থাকায় থাইল্যান্ড, বালি, ভারতে গিয়ে এতদিন এর স্বাদ নিতে হয়েছে। সাধারণত সাগর বা কোনো জলরাশির নিচে যেখানে প্রবাল আছে যেখানে সাঁতরে সাঁতরে বিশেষ প্রাণিজগৎ দেখার ব্যবস্থাই হচ্ছে ‘স্নোরকেলিং’। এই প্রক্রিয়ায় একজনকে বিশেষ ধরনের  ব্রেথিং টিউব বা ডাইভিং মাস্ক ব্যবহার করে পানির নিচে নামতে হয়। সাঁতারের সুবিধার্থে পায়ে থাকে প্লাস্টিকের লম্বা আকারের বিশেষ জুতা। সেন্ট মার্টিনে সাগরের নিচে প্রবাল ও সামদ্রিক জীবজগৎ দেখতে প্রাথমিকভাবে স্নোরকেলিং শুরু হয়েছে। এখন অভিজ্ঞ কয়েকজন উদ্যোক্তা স্নোরকেলিং ট্যুরের আয়োজন করছেন। কিছু পর্যটক আবার টাঙ্গুয়ার হাওরেও এখন স্নোরকেলিং করছেন। আবার গাজীপুরের কাছেই বেস ক্যাম্প নামক প্রতিষ্ঠানে ব্যতিক্রমী জিপ লাইনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উঁচু গাছের ডালের সঙ্গে বিশেষ পদ্ধতিতে ঝুলন্ত লম্বা দড়িতে দেহের ভারসাম্য বজায় রেখে হেঁটে যাওয়ার এই পদ্ধতিটি সম্প্রতি বাংলাদেশের ভ্রমণপিয়াসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর বাইরে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন স্থানে ক্রমেই ট্র্যাকিং ও ক্যাম্পিংয়ের মতো কার্যক্রমগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ছুটি পেলেই দুর্গম এসব পাহাড়ি এলাকায় বন্য পথ ধরে বিভিন্ন গিরিপথ ও জলপ্রপাত দেখার জন্য ব্যাকপ্যাক কাঁধে বেরিয়ে পড়ছে বিভিন্ন বয়সী কর্মজীবী নারী-পুরুষ ও শিক্ষার্থী। দুর্গম পাহাড়ে রাতে কোন একটি জলপ্রপাতের পাশে ব্যাকপ্যাকে নেওয়া তাঁবু খাটিয়ে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পর্যটকরা পার করে দিচ্ছেন তাদের জীবনের সুন্দর একটি রাত। এ ছাড়াও ঢাকার আশপাশের নদীগুলোতে এবং সুন্দরবনে বর্তমানে রিভার ক্রুজের আয়োজন করছে কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সি। পরিবার ও প্রিয়জনকে নিয়ে নদীমাতৃক বাংলার রূপ দেখতে অনেকেই বিভিন্ন প্যাকেজের এসব রিভার ক্রুজ  সেবা নিচ্ছেন। আবার চাহিদা থাকায় ঢাকায় কয়েক বছরে ভ্রমণের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সংগ্রহ নিয়ে বেশ কয়েকটি দোকানও গড়ে উঠেছে। এসব দোকানে স্নোরকেলিং করার মাস্ক, ক্যাম্প, স্লিপিং ব্যাগসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। আর এমন ব্যবসায় বিনিয়োগ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক তরুণ।

সর্বশেষ খবর