সোমবার, ৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
বাজেট নিয়ে যত ভাবনা

করের বোঝা কমিয়ে থাকবে জনতুষ্টির চেষ্টা

‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে বাজেট ঘোষণা ৭ জুন ভ্যাট বসবে ফেসবুক গুগল ইউটিউবে

মানিক মুনতাসির

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে কোনো করের বোঝা জনগণের ঘাড়ে চাপাতে চায় না সরকার। এ জন্য করপোরেট কর কমানোর পাশাপাশি আমদানি শুল্ক ও অন্যান্য খাতসহ পুরো কর কাঠামোতে এক ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।  ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট আসছে ৭ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সেই সঙ্গে গ্রামীণ রাস্তাঘাট সংস্কার এবং চলমান মেগা প্রকল্পগুলো শেষ করার দিকে অধিক মনোযোগ থাকবে আগামী অর্থবছরে। একইভাবে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সব ধরনের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে আগামী বছরের বাজেটে। এর আওতায় নতুন করে আরও ১১ লাখ মানুষকে যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে সরকার। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে করপোরেট করহার কিছুটা কমানো হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে। তবে অর্থমন্ত্রী আগামী কয়েক বছরে সার্বিকভাবে করপোরেট করহার কমিয়ে আনার একটি পরিকল্পনা দেবেন। তবে বিশাল বাজেটে অর্থায়ন করতে রাজস্ব আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করে সরকার। এ জন্য গুগল, ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম কর্তৃপক্ষের আয়কর কীভাবে নেওয়া হবে, এর কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ছিল না। ডিজিটাল বাজারজাতকরণ খাত দেখিয়ে এসব খাত থেকে আয়কর নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে এনবিআর। এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ থাকলেও তা আদায় করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে এবারের বাজেটে।

আগামী বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদেরও কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। বর্তমানে শূন্য, ১০, ১৫, ২০, ২৫ ও ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে ৫ কিংবা সাড়ে ৭ শতাংশ হারে আরেকটি কর স্তর রাখা হতে পারে।  এতে নিচের দিকের করদাতাদের ওপর করের চাপ কিছুটা কমবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ব্যবসায়ীদের সামান্য হলেও স্বস্তি দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে উন্নয়নের ফিরিস্তি দৃশ্যমান করতে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগসহ মেগা প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। নতুন এডিপির ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাখা হয়েছে ১০টি মেগা প্রকল্পের জন্য। আর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের রাস্তাঘাট, ব্রিজ সংস্কার ও নির্মাণের জন্য সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে পরিবহন খাতে। কেননা নির্বাচনের বছরে রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার করে জনগণকে আকৃষ্ট করতে চায় সরকার। অর্থমন্ত্রীর এবারের বাজেট বক্তৃতায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১০ বছরের উন্নয়ন ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করায় বাংলাদেশ এখন সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় অবস্থান করছে বলে মনে করে সরকার। এ জন্য এবারের বাজেটের শিরোনামও দেওয়া হয়েছে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’। মোট ১০৩ পৃষ্ঠার এই বাজেট বক্তৃতা প্রায় প্রস্তুত হয়ে গেছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের ঘষামাজা। সেই সঙ্গে করকাঠামো ঠিক করতে অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শেষ মুহূর্তে বৈঠক করবেন। এরপরই বাজেট বক্তৃতা এবং অর্থবিল ছাপানোর জন্য বিজি প্রেসে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। গত বছর শেষ মুহূর্তে স্থগিত করা নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে। সেই লক্ষ্যে এখন প্রস্তুতি শুরু করেছে এনবিআর। এ জন্য ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতি সমর্থন রেখে ১৫ শতাংশ একক ভ্যাট হার ব্যবস্থা থেকে সরে এসে ভ্যাটের ছয়টি হার বা স্তর চূড়ান্ত করা হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত চার স্তরও হতে পারে বলে জানিয়েছে এনবিআর। সূত্র জানায়, আগামী বাজেটের মোট আকার হতে পারে ৪ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট আকার ধরা হয়েছিল চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। অবশ্য সংশোধন করে এ আকার তিন লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। সে হিসাবে এ বছর বাজেট বাড়ছে প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘোষণার পর সরকারের হাতে সময় থাকবে মাত্র ছয় মাস। এরপরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ফলে ছয় মাসকেই অধিক গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে সাজিয়েছে সরকার। বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি এবারের বাজেটকে নির্বাচনী বাজেট হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন খোদ অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজেট ঘোষণার সময় বড় বাজেটই দেয় সে যে সরকারই হোক। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা সংশোধন করে কমিয়ে আনা হয়। আবার সেই সংশোধিত বাজেটও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। ফলে বাজেটের সুফল সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এ জন্য বাস্তবতার নিরিখে বাজেট দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর একটা রূপরেখা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অনেক আগেই। ফলে হয়তো সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের চাকরিজীবীরাই পেনশনের আওতায় আসবেন। অবশ্য এটা বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে ধসে পড়া ব্যাংকিং খাতে মানুষের আস্থা ফেরাতে আর সুশাসন প্রতিষ্ঠায় একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠনেরও ঘোষণা দেবেন অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায়।

সর্বশেষ খবর