সোমবার, ৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
বাজেট নিয়ে যত ভাবনা

বাস্তবায়নে ব্যর্থদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে : ড. জামাল উদ্দিন

আলী রিয়াজ

অর্থনীতিবিদ ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যে কর্মকর্তারা বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারেন না, অর্থ খরচ করতে পারেন না, তারা ব্যর্থ, অদক্ষ, অকর্মণ্য।

তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদের আর্থিক সুবিধা বন্ধ ও চাকরিচ্যুত করা উচিত। আগামীতে কেমন বাজেট চাই— প্রশ্নে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে বাজেটের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, প্রতি বছর বিশাল আকারের বাজেট দেওয়া হয়। বলা হয় উচ্চাভিলাষী বাজেট। কিন্তু বছর শেষে দেখা যায় ৭০ শতাংশের বেশি বাস্তবায়ন হয়নি। যখন ৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট হয়েছে তখনো উচ্চাভিলাষী বাজেট বলে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এখন ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে একই কথা বলা হচ্ছে। জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘লক হয়ে আছে বাংলাদেশ। এখন আনলক করতে হবে। আনলক করতে সেভাবেই বাজেট প্রণয়ন করা উচিত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাজেট হচ্ছে এখন। রাষ্ট্রের বাজেটের যে চরিত্র তা নেই আমাদের। বাজেট প্রণয়নের পদ্ধতিতে বলা আছে, প্রতি তিন মাস পর পর পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। কিন্তু আমাদের এখানে তা করা হয় না, যা সম্পূর্ণ সংবিধানবহির্ভূত। যে কর্মকর্তারা বাস্তবায়ন করতে পারছেন না, তাদের কেন চাকরিতে রাখতে হবে? তাদের সব ধরনের আর্থিক সুবিধা, বোনাস বন্ধ করা উচিত। প্রয়োজনে চাকরিচ্যুত করা উচিত। একজন যুগ্মসচিব থেকে ওপর পর্যন্ত কর্মকর্তার পেছনে রাষ্ট্রের প্রায় ১০-১২ লাখ টাকা খরচ হয়। তাদের কেন এ সুবিধা দিতে হবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলের আইন দিয়ে রাজস্ব সংগ্রহ করা হয়। যে ব্রিটেন তাদের নিজেদের আইন পরিবর্তন করেছে, কিন্তু বাংলাদেশ তা টিকিয়ে রেখেছে। সারা দেশে উপজেলা পর্যায়ে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য বরাদ্দ ভবনগুলো কর, ভ্যাট অফিসের জন্য বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে। সব জেলায় কর অফিস করতে হবে। যেভাবে আছে তা কোনোরকমে, এভাবে কর আদায় বাড়ানো যাবে না। সারা দেশে প্রত্যেক গ্রামে একটি করে বাজার আছে। যেখানে ১০ জন করেও যদি ব্যবসায়ী থাকেন তাদের করের আওতায় আনা যায়। আদায় করতে পারলে এখান থেকে ১ লাখ কোটি টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব। ইউএনও অফিসের সঙ্গে কর অফিস করা যায়। কর কর্মকর্তাদের জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়াতে হবে। এ ছাড়া এনবিআর যারা চালান তারা সবাই সাধারণ ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তা। তারা কীভাবে এ প্রতিষ্ঠান চালাবেন? এনবিআর চালাবেন এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তাদের পদোন্নতি দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের পদ নির্দিষ্ট করতে হবে। তার জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা থাকা উচিত বাজেটে।’ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ব্যাংক খাতে দুরবস্থা চলছে। ভর্তুকি দিয়ে ব্যাংক বাঁচানো হচ্ছে। কেন বাজেটের টাকা ব্যাংক খাতে ভর্তুকি যাবে? ঋণখেলাপিদের বাঁচানোর জন্য নানা আইন আছে। ঋণখেলাপিদের বিচার করতে হবে। তাদের রিট সুবিধা বন্ধ করে আলাদা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এর মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি স্নাতকোত্তর পাস করে বেকার থাকছেন। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। সবার জন্য লজ্জার। দেশে প্রায় ৩০ শতাংশ পদ খালি পড়ে আছে। ব্যাংক থেকে শুরু করে সব বিভাগে পদ খালি পড়ে আছে বছরের পর বছর। এসব পদে নিয়োগ দিতে হবে। প্রয়োজনে ওপরের কর্মকর্তাদের ছাঁটাই করে নতুন মুখ নিয়ে আসতে হবে, তারা অনেক বেশি কাজ করতে পারবে। সব শিক্ষিত ছেলে চাকরি পেলে এসব কোটা আন্দোলন হতো না।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পরিচালক আরও বলেন, ‘বিশ্বের যেসব দেশের আমাদের অ্যাম্বাসি আছে তাদের প্রতি বছর টার্গেট দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশের যে পরিমাণ রপ্তানি হয়েছে পরের বছর আরও বেশি টার্গেট দিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের দেশে অন্য কোনো দেশের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে এলে, সংশ্লিষ্ট দেশের হাইকমিশনার বা রাষ্ট্রদূতরা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পড়ে থাকেন। আমাদের কূটনীতিকরা উল্টো কীভাবে অসহযোগিতা করা যায় তাই খুঁজতে থাকেন। কোনো ব্যক্তিকে তারা সহযোগিতা করেন না। বিভিন্ন সময় অভিযোগ আসে, তারা ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এ সুবিধা প্রত্যেক মানুষের জন্য নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ইউএনও, চেয়ারম্যান, মেম্বার যেন চুরি করতে না পারেন।’

সর্বশেষ খবর