সোমবার, ৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
মৃত্যুর ৩৩ বছর পর স্বাক্ষর জাল

লেখক প্রমথ চৌধুরীদের জমি দখলের অভিযোগ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

বাংলা ভাষার প্রখ্যাত লেখক প্রমথ চৌধুরীর মৃত্যুর ৩৩ বছর পর তার এবং তার স্বজনদের স্বাক্ষর জাল করে প্রায় ৩১ একর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার খাদুলী গ্রামের রাজাকার সাইফুল ইসলাম ওরফে সয়ফল ও তার ছেলে সৈয়দ এবং তার স্বজনদের বিরুদ্ধে। শুধু লেখক পরিবারের নয়, স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের জমিও সিলপ্যাডের মাধ্যমে টেম্পোরিং ও জাল স্বাক্ষর করে দখল করে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ঘটনায় সরকারের পক্ষে আদালতে মামলা করা হয়েছে। স্থানীয়রা অবিলম্বে রাজাকারের ছেলে সৈয়দ গংদের কাছ থেকে জমি উদ্ধার এবং প্রখ্যাত লেখকের স্বাক্ষর জালকারী সৈয়দ গংদের শাস্তি দাবি করেছেন। জানা যায়, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বড় পাঙ্গাসী ইউনিয়নের খাদুলী গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে মৃত সাইফুল ইসলাম ওরফে সয়ফল জীবিত অবস্থায় একজন রাজাকার ছিল। যুদ্ধের সময় সয়ফলের সহযোগিতায় পাকবাহিনী খাদুলী গ্রামের দোকানপাট-বসতবাড়ি লুটপাট করে ও পুড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর সয়ফল এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়। কিন্তু স্বাধীনতার পর আবারও সয়ফল বেপরোয়া হয়ে ওঠে। জাল ডিক্রি ও জাল কাগজ তৈরি করে দখল করতে শুরু করে অন্যের জমি। প্রখ্যাত লেখক প্রমথ চৌধুরী ও তার স্বজনদের স্বাক্ষর জাল করে সোলেনামা তৈরি করে তাদের ৩১ একর জমি দখল করে নেয়। প্রমথ চৌধুরী যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করলেও তার পৈতৃক নিবাস ছিল পাবনার চাটমোহর থানার হরিপুর গ্রামে। ওই সময় সিরাজগঞ্জ জেলা পাবনার একটি মহকুমা শহর থাকায় প্রমথ চৌধুরীরা খাদুলী গ্রামে বহু সম্পত্তি ক্রয় করেছিল। প্রমথ চৌধুরী ও তার স্বজনরা এক সময় ভারতে চলে যায়। সেখানেই প্রমথ চৌধুরী ১৯৪৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু রাজাকার সাইফুল ইসলাম ওরফে সয়ফল ও তার বাবা আবেদ আলী প্রখ্যাত লেখক প্রমথ চৌধুরীর মৃত্যুর ৩৩ বছর পর ১৯৭৮ সালের ১৪ নভেম্বর তার স্বাক্ষর জাল করে সোলেনামা তৈরি করেন। যার নম্বর-৩৩/৭৭। সেই সোলেনামার ভিত্তিতে উল্লাপাড়া সহকারী আদালত মামলা করে ডিক্রি লাভ করে (ডিক্রি নং-৪৪/০১) এবং ২২ একর জমি দখল নেন। তবে ওই সময় সরকার পক্ষের আইনজীবীর ব্যর্থতার কারণে জাল সোলেনামাটি সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছিল বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। অন্যদিকে সরকার প্রমথ চৌধুরী ও তার স্বজনদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করেন। এ অবস্থায় সয়ফলের ছেলে সৈয়দ আলী ২০১২ সালে প্রমথ চৌধুরীর জাল স্বাক্ষরকৃত সোলেনামা ও আদালতের ডিক্রি মূলে পুনরায় অর্পিত ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং-২২৯০/১২)। কিন্তু অদ্যাবধি আদালতে মূলে কাগজপত্র জমা দেয়নি। অন্যদিকে, সরকার পক্ষে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক প্রমথ চৌধুরী ও তার স্বজনদের স্বাক্ষরকৃত জাল সোলেনামা (৩৩/৭৭) বাতিলের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জাহিদ হোসেন জানান, আদালতে বিবাদী প্রমথ চৌধুরী স্বাক্ষরিত যে সোলেনামা জমা দিয়েছে তা জাল। ১৯৭৮ সালে প্রমথ চৌধুরী স্বাক্ষরিত সোলেনামা দেওয়া হয়েছে অথচ প্রমথ চৌধুরী ১৯৪৬ মারা গেছেন। আদালত দুটি মামলার মধ্যে অর্পিত ট্রাইব্যুনাল একটি খারিজ করে দিয়েছেন। অন্যটি আদালতে শুনানি শেষে আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়াও নরেশ চন্দ্র সরকারের মামলাটির শুনানি চলছে বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সৈয়দ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদটি প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।

সর্বশেষ খবর