সোমবার, ৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

দল আর জোট নিয়ে টেনশনে বুলবুল

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

দল আর জোট নিয়ে টেনশনে বুলবুল

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে জমে উঠেছে রাজনৈতিক দলগুলোর বাগ্যুদ্ধ। আওয়ামী লীগের প্রচারণা যখন সরব, তখন অনেকটাই ঢিমেতালে বিএনপি-জামায়াত। পাশাপাশি মহানগর বিএনপি, যুবদলের মধ্যে ক্ষোভ ও কোন্দলের আগুন শেষ পর্যন্ত কোনদিকে গড়ায়, সেটি নিয়েও শঙ্কিত দলটির অনেক নেতা-কর্মী। নির্বাচনকে ঘিরে জামায়াতের প্রকাশ্যে কোনো কর্মকাণ্ড নেই। তবে গত কয়েক দিন আগে নগরীতে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসাইনের মেয়র প্রার্থী হিসেবে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। দলটির রাজশাহী মহানগর নেতারাও বলছেন, তারা আগামী নির্বাচনে প্রার্থী দিতে চান, কিন্তু সেটি নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তের ওপর। দলীয় সূত্রমতে, মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর। রাসিক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সভাপতি ও শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১২ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয় কেন্দ্র থেকে। কিন্তু ওই কমিটি গঠনের পর মহানগর বিএনপি অফিসে ভাঙচুর, তালা দেওয়াসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নগরীতে। তখন থেকে চলমান বিরোধ মেটেনি এখনো। গত কয়েক দিন আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনের মঞ্চেও মাইক ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকারের নাম ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন মঞ্চে ওঠে মাইক ছুড়ে মারেন। তবে ওই ঘটনার পরও একসঙ্গে বসে মহানগর নেতা-কর্মীরা আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে এখনো আছে চরম কোন্দল।

বিশেষ করে মহানগর বিএনপিতে কার সমর্থকরা দলীয় পদ পাবেন-তা নিয়েই চলছে মূলত দ্বন্দ্ব। এক্ষেত্রে দ্বন্দ্বটা বিরাজ করছে সাবেক মেয়র ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু গ্রুপ এবং বর্তমান মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল গ্রুপের মধ্যে। দলীয় সূত্রমতে, ১২ সদস্যের কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর সভাপতি বুলবুলকে নিয়ে প্রথমে আপত্তি তোলেন মিনু সমর্থকরা। তার সঙ্গে যোগ দেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনও। ফলে সভাপতি হয়েও কোণঠাসা অবস্থানে চলে যান বুলবুল। কিন্তু দলের শক্ত অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত বুলবুল থেকে সরে আসে মিনু গ্রুপ। তারা তখন দাবি করতে থাকেন সহ-সভাপতি ও যুগ্ম-সম্পাদকসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে মিনু-মিলন গ্রুপের নেতাদের বসাতে। এক্ষেত্রেও বাদ সাধেন বুলবুল। তিনি তার সমর্থক মামুনুর রশিদ, আসলাম সরকারদের মতো নেতাকে গুরুত্বপর্ণ পদে রাখতে চান। আর মিনু-শফিকুল হক মিলনরা চান সাইদুর রহমান পিন্টু ও নজরুল হুদাদের মতো নেতাকে রাখতে। এ নিয়ে ফের শুরু হয় দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্ব এখনো চলছে। রাজশাহী মহানগর বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, মহানগর বিএনপিতে যে অবস্থা এখনো আছে-তাতে সিটি নির্বাচনের আগে উভয় গ্রুপকে একসঙ্গে নিয়ে বসতে হবে কেন্দ্রীয় নেতাদের। এ ছাড়া এখানকার কোন্দল মেটানো সম্ভব নয়। সেই কোন্দলের রেশ গিয়ে পড়বে নির্বাচনে। যাতে ভরাডুবি হবে দলীয় প্রার্থীর। এক্ষেত্রে বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বা অন্য যে কেউ প্রার্থী হোক না কেন নির্বাচনে তার বড় প্রভাব পড়বে। সূত্রমতে, মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম কোন্দলের কারণে ১২ সদস্যের আংশিক কমিটির মধ্যে সভাপতি-সম্পাদককে রেখে বাকি ১০ জনের পদ স্থগিত করে দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এরপর প্রায় এক বছর কেটে গেল শুধু সভাপতি-সম্পাদক দিয়েই চলছে মহানগর বিএনপি। কোন্দলও মেটেনি। এমনকি সেই রেশ গিয়ে পড়েছে মহানগর যুবদলের কমিটিতেও। মহানগর যুবদলের সভাপতি করা হয়েছে মিনু গ্রুপের বলে পরিচিত মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইটকে এবং সম্পাদক করা হয়েছে বুলবুল গ্রুপের বলে পরিচিত মহানগর ছাত্রদলের আরেক সাবেক সভাপতি মাহফুজুর রহমান রিটনকে। যুবদলের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই সুইট মেয়র নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বুলবুলের বিরুদ্ধেও প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। তার ভাষ্য, মেয়র বুলবুল রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি হলেও তিনি নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করেন না। ফলে দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে বুলবুলকে নিয়ে। আবার তিনি নগরবাসীর জন্যও তেমন কোনো কাজ করতে পারেননি। এ কারণে দলের নেতা-কর্মীই তার ওপর ক্ষুব্ধ। ফলে নগরবাসী তাকে ভোট দেবে কীভাবে। এ কারণে আগামী নির্বাচনে সুইট বিএনপির প্রার্থী হতে চান। দল তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি পাস করবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে দলের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই বলে দাবি করেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। যারা বলছে-সেটি তাদের নিজস্ব মতামত। বিএনপি এখন সংগঠিত দল। কিন্তু আমাদের নির্বাচনে মাঠে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে আমরা কোনো প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটিও হবে দ্রুত। কিন্তু সরকার আমাদের যে অবস্থায় রেখেছে-তাতে কমিটি করতে দেরি হচ্ছে।’ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, খুলনায় যেভাবে ভোট ডাকাতি হলো, তাহলে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আমাদের লাভ কী? কাজেই আগামী সিটি নির্বাচনে আমরা অংশ নেব কিনা-তা নিশ্চিত নয়। তারপরও কেন্দ্রীয় কমিটি আছে। কেন্দ্রীয় কমিটি বসে যে সিদ্ধান্ত দেবে-সেই অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নেব।’ মেয়র বুলবুল আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। কিন্তু আমাদের তো মাঠে নামতেই দেওয়া হচ্ছে না। আমার ব্যানার, পোস্টারগুলোও ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রচার-প্রচারণা চালাতে গেলেও পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে-তাহলে আমরা কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেব?’ এদিকে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের এখন পর্যন্ত কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। নির্বাচনকেন্দ্রিক তারা শুধু মহানগর জামায়াতের মেয়র প্রার্থী হিসেবে সিদ্দিক হোসাইনের নামে নগরীতে কিছু পোস্টার সাঁটিয়েছে। তবে কোনো সভা ও প্রচারণার খোঁজ পাওয়া যায়নি। নগর জামায়াতের নায়েবে আমির আবু ইউসুফ সেলিম বলেন, ‘আমরা একজন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছি। তবে সিটি নির্বাচনে অংশ নেব কিনা, সেটি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। কেন্দ্র যেভাবে বলবে আমরা এই নির্বাচনে সেই পদক্ষেপ নেব। এর আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না।’

সর্বশেষ খবর