মঙ্গলবার, ৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

মিয়ানমারকে আইনের আওতায় আনার তাগিদ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ওপর যে নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, এর তদন্ত ও বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) মাধ্যমে করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে আগামী ১১ জুনের মধ্যে বাংলাদেশের কাছে আইসিসি যে তথ্য চেয়েছে তা দেওয়া উচিত, যার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও ‘গণহত্যা’র বিষয়ে মিয়ানমারকে জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ‘জবাবদিহিতা : আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও রোহিঙ্গা সংকট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে দেশের ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।

প্রসঙ্গত, গেল ৯ এপ্রিল মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের বিষয়টি তদন্ত করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আছে কি না তা জানতে চেয়েছিলেন ওই আদালতের এক কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদা। আদালতের এখতিয়ার প্রয়োগের পক্ষে প্রসিকিউটরের যুক্তি ছিল, যদিও মিয়ানমার রোম চুক্তি স্বাক্ষর করেনি, তথাপি এ পরিস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ‘জোরপূর্বক আন্তর্জাতিক সীমানায় প্রবেশ করানো’, যা ঘটেছে বাংলাদেশের সীমান্তে। ১১ এপ্রিল প্রি-ট্রায়াল চেম্বার এ যুক্তির পক্ষে মত প্রদান করেন। তারপর ৭ মে আইসিসির প্রি-ট্রায়াল চেম্বার ‘যে পরিস্থিতিতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশের সীমানায় আশ্রয় নিয়েছে’ সে বিষয়ে আইসিসি তার এখতিয়ার চর্চা করবে কি না তা সম্পর্কে বাংলাদেশকে তিনটি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ জমা দেওয়ার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ তার জবাব দেওয়ার জন্য ১১ জুন পর্যন্ত সময় পাবে। আগামী ২০ জুন শুনানির দিন ধার্য করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। এমন প্রেক্ষাপটে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস ‘জবাবদিহিতা : আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও রোহিঙ্গা সংকট’ শীর্ষক এই আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে আইসিসির উদ্যোগ ও বাংলাদেশের করণীয় নিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বাংলাদেশের কাছে যে তথ্য ও প্রমাণ চেয়েছে সেগুলো দেওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মূল ভিত্তি ‘রোম বিধি’ অনুযায়ী, আইসিসি চাইলে মিয়ানমার যে নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তার তদন্ত করতে পারে। কারণ অনেক মানুষ হত্যা করা হয়েছে। সাত লাখেরও বেশি মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, যার অর্ধেক শিশু। তিনি বলেন, যে মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো ঘটেছে তা আমলে নিয়ে আইসিসি চাইলে তার বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। কারণ এই অপরাধের যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে। আর বাংলাদেশ ‘স্টেট পার্টি’ হিসেবে এখানে ভূমিকা পালন করতে পারে। আলোচনায় উঠে আসে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে সংঘটিত জাতিগত নিধনযজ্ঞের বিভিন্ন দিক। যেখানে বলা হয়, মে মাসে ৪০০ রোহিঙ্গা নারীর পক্ষে তাদের স্বাক্ষরিত একটি আবেদনপত্র নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জমা দেন আইনজীবীরা। ওই আইনজীবীরা মনে করেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতই একমাত্র ভরসা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আইনি উদ্যোগ খুবই জরুরি। গণহত্যার বিচার কিংবা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে জবাবদিহির আওতায় আনতেই হবে। এ ক্ষেত্রে আইসিসি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। একই সঙ্গে মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করতে হবে। আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, ‘মিয়ানমারকে যতক্ষণ পর্যন্ত আইনি বাধ্যবাধকতার আওতায় আনা না যায়, ততক্ষণ তারা বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে না। সে কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও জাতিসংঘকে উদ্যোগী হয়ে মিয়ারমারকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশ যেহেতু আইসিসির সদস্য, সে ক্ষেত্রে তদন্ত ও বিচারকাজে আমরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারি। এ জন্য বাংলাদেশ সরকারের উচিত আইসিসির চাওয়া তিনটি বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ দেওয়া।’

উল্লেখ্য, আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে ব্যাপক অভিযানের পর প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

সর্বশেষ খবর