বুধবার, ১৩ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর ক্রসফায়ার চক্র

মির্জা মেহেদী তমাল

ভয়ঙ্কর ক্রসফায়ার চক্র

এই তো কদিন আগেই জাপান থেকে দেশে ফিরেছেন নাফিজুর রহমান। বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করবেন ঢাকায়। এবার অনেক দিন পর তার দেশে ফেরা। লেখাপড়া নিয়ে অনেক চাপে থাকতে হয় জাপানে। তাই দেশে ফিরে আত্মীয়সজন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা করা, প্রিয় শহর ঢাকা ঘুরেফিরে দেখতে প্রায় প্রতিদিনই বের হন নাফিজ। গেল সপ্তাহের একদিন দুপুরের পর বাসা থেকে বের হন তিনি। সেদিন ইফতার বাইরে করবেন। ইফতারের পর বাসায় ফিরবেন, বলে যান বাসায়।

রাত ৮টা পেরিয়ে গেছে। নাফিজের খবর নেই। তার মা নাফিজকে ফোনে চেষ্টা করেন। কী ব্যাপার! ফোন বন্ধ! ইফতারের আগেও তো কথা হলো ফোনে। এখন বন্ধ কেন? ভাবেন নাফিজের মা রেহানা আক্তার। মা ভাবেন হয়তো ফোনে চার্জ নেই। রাত ৯টার পর থেকে মায়ের টেনশন। বার বার ফোন দিয়েও পান না নাফিজকে। রাত ১০টার দিকে নাফিজের ফোন থেকে কল পান তিনি। অন্য প্রান্ত থেকে অপরিচিত একজন কথা বলেন। নাফিজের মাকে তিনি বলেন, আমরা র‌্যাবের লোক। নাফিজ ১০০ পিস ইয়াবাসহ ধরা পড়েছেন। ছেলেকে যদি বাঁচাতে হয়, তাহলে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। না হলে নাফিজকে ক্রসফায়ারে দেবেন তারা। এ সময় তারা একটি বিকাশ নম্বর পাঠান। এ কথা শুনে নাফিজের মা ভয় পেয়ে যান। তিনি বার বার অনুরোধ করেন ছেলেকে কিছু না করতে। কিন্তু যখন ফোন দেওয়া হয় তখন বিকাশের দোকানগুলো সব বন্ধ হয়ে যায়। তখন দুষ্কৃতিকারীরা তাকে ডাচ্?-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে বলে। একপর্যায়ে যখন তাদের বলেন, এত রাতে এভাবে টাকা পাঠানো সম্ভব নয়, তখন তারা (র‌্যাব সদস্য) সরাসরি টাকা নিয়ে দেখা করতে বলেন। তখন স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে রাত ১টার পর অপহরণকারীদের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী রমনার মিরবাগের একটি নির্মাণাধীন ভবন এলাকায় যান রেহানা। মিরবাগে যাওয়ার পর অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা তাদের অন্ধকার একটি গলির দিকে নিয়ে যান। দুজন যুবক এসে বলেন, স্যারেরা তার ছেলেকে চড়-থাপ্পড় মেরেছেন। আর কিছুই করা হয়নি। তখন ১ লাখ টাকা দেওয়ার পর নাফিজকে কয়েকজন যুবক ধরাধরি করে তাদের সামনে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে নাফিজকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। নাফিজের কাছ থেকে কথা শুনে তারা নিশ্চিত হন, র‌্যাব নয়; ওরা অপহরণকারী ভয়ঙ্কর চক্র। পুলিশ জানিয়েছে, নাফিজের পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া ১ লাখ টাকা এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মামলার এজাহারে বলা হয়, অপহরণ করে নেওয়ার পর দুর্বৃত্তরা নাফিজের সামনে ১০০টি ইয়াবা রেখে ছবি তোলে। নাফিজের কাছে থাকা ৫০০ মার্কিন ডলার এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। আদালতকেও পুলিশ এক প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, আসামিরা নাফিজকে পিস্তল দিয়ে হত্যার ভয় দেখায় এবং রড দিয়ে নির্যাতন করে। ‌র‌্যাব-১ বলে ভুয়া পরিচয় দিয়ে তাকে (নাফিজকে) ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকি দেয়। নাফিজের মা রেহানা আক্তার বলেন, ‘আমার নির্দোষ ছেলেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেছে। র‌্যাব পরিচয়ে আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ নাফিজ জানান, রাত ৮টার দিকে হাতিরঝিল দিয়ে রামপুরায় যাচ্ছিলেন। হঠাৎ ১০-১২ যুবক তার পথরোধ করেন। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যান। নাফিজ গত মাসে জাপান থেকে ঢাকায় ফেরেন। জাপানে লেখাপড়া করা নাফিজ এখন রামপুরায় মা-বাবার সঙ্গে থাকছেন। রমনা থানার পুলিশ জানায়, গ্রেফতার ছয় আসামি র?্যাবের ভুয়া পরিচয় দিয়ে নাফিজকে অপহরণ করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর