রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

হলি আর্টিজান এখন

মাহবুব মমতাজী

অভিজাত এলাকা রাজধানীর গুলশান। এ এলাকার ৭৯ নম্বর সড়কটি দেখলে এখন বোঝার কোনো উপায় নেই, দুই বছর আগে কত নির্মম জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছিল এখানে। সুনসান নীরব চারপাশ। পিচঢালা নতুন চকচকে সড়ক।

রাস্তার কোথাও কোনো আবর্জনা নেই। মাঝে মাঝে দু-একটি গাড়ি আসা-যাওয়া করছে। কিন্তু রিকশা চোখে পড়ছে দিনের বেলায় কালেভদ্রে। সাধারণের চলাচলও এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা যায় এ চিত্র। ঘটনাস্থলের পাশে লেক ভিউ ক্লিনিকটি এখনো চলছে তার আগের গতিতে। জানা গেল, হোলি আর্টিজান বেকারিটি এখন আর ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িতে নেই। এ বাড়িতেই ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। আঙিনার সবুজ ঘাস আর দোলনচাঁপা গাছের শুভ্র ফুলগুলোর হাসি সেই স্মৃতি যেন চাপা দিতে চাইছে। বাড়িটির প্রবেশমুখে ক্রসবার ফেলে দাঁড়িয়ে আছেন নিরাপত্তাকর্মী আক্তার হোসেন। বাঁ পাশে যেখানে হোলি আর্টিজান ছিল, সেই বাড়ির ফটকে ঝুলছে তালা। সেখানে যেতে চাইলে বাধা দিয়ে নিরাপত্তাকর্মী জানালেন, মালিকের নিষেধ আছে। ছবি তোলাও নিষেধ আছে। ভেতরটা মেরামত করে বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। আলাপকালে আক্তার হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ক্লিনিকে যারা আসেন, তাদের আসার যথাযথ কারণ জেনে ভেতরে যেতে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। আর বাড়িটিতে মালিক সাদাত মেহেদীর পরিবার থাকেন। তার মামা সার্বক্ষণিক অবস্থান করেন এখানে। মাঝে মাঝে তিনি এবং তার স্ত্রী সামিরাও আসেন। মাস ছয়েক ধরে তাদের এই অনিয়মিত বসবাস চলছে।

এখনো হোলি আর্টিজান হামলার ভয়াবহতা ভুলতে পারেননি আশপাশের বাসিন্দারা। মনে পড়লে আজও যেন আতঙ্কে তাদের গা শিউরে ওঠে। সেখানকার ৩ নম্বর প্লটের বাসিন্দা রুহুল পারভেজ বলেন, ‘ওই রাতে গোলাগুলির শব্দে আমরা ভয়ে কাতর ছিলাম। মনে হচ্ছিল আমাদের জীবন যেন কারও হাতের মুঠোয় চলে গেছে। যে কোনো মুহূর্তে ত্যাগ করতে হতে পারে পৃথিবীর মায়া। আর এক রাতে এত লোকের মৃত্যু এখনো মনে চরম পীড়া দেয়।’

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালে ১ জুলাই গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে গুলশান এভিনিউর র্যাংগস আর্চাড ভবনে এটি সরিয়ে নেওয়া হয়। গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর রোডে প্রায় দুই হাজার বর্গফুট জায়গায় ছিল হোলি আর্টিজান বেকারি। সবুজ ঘাসের লন, লেকসাইড ভিউ ও সুস্বাদু খাবারের জন্য বিদেশিদের কাছে এটি ছিল বেশ প্রিয় এক স্থান। ‘সেই সময় সন্ধ্যা নামতেই বিদেশিদের ভিড়ে জমে উঠত এলাকাটি। উৎসবের এক অন্য আমেজে ৭৯ নম্বর রোডটিতে একের পর এক আসা-যাওয়া থাকত। আড্ডায় মেতে উঠত রাজধানীর অভিজাত শ্রেণির সন্তানরা’— জানালেন লেক ভিউ ক্লিনিকের কর্মচারী হাকিম। তিনি বলেন, প্রায় সময় জাপানি নাগরিকরা বাড়িটি দেখতে আসেন। তালাবদ্ধ গেটে তারা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ফুল দিয়ে চলে যান।

জানা যায়, ঘটনার চার মাস পর সিলগালা থাকা ওই বাড়িটি মালিকপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর