রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

বেপরোয়া নারী অপরাধী

মাদক ব্যবসায়ীর ৩০% নারী

জিন্নাতুন নূর

বেপরোয়া নারী অপরাধী

একদা ঘর-সংসার সামলাতো যে নারী, সে-ই এখন সংসারে সচ্ছলতা আনতে হয়ে উঠছে অপরাধপ্রবণ। অতীতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নারীর সম্পৃক্ততা ছিল খুবই কম। এখন দিন দিন তাদের সম্পৃক্ততা বেড়েই চলেছে। দরিদ্রতা, অপরাধী হিসেবে নারীর প্রতি সন্দেহ তৈরি না হওয়া, তার ভালো ইমেজের অধিকারী হওয়া এবং অপরাধে জড়াতে পারে না এমন বিশ্বাসের সুযোগে ক্রমেই নারী অপরাধীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা করছে খুন, অবৈধ অস্ত্র বহন, অপহরণ আর মানব পাচার ইত্যাদি। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্যে, রাজধানীর মাদক স্পটগুলো নিয়ন্ত্রণ করে এমন একশর ওপর মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে ৩৩ জনই নারী। গরিব, সচ্ছল ও শিক্ষিত সব শ্রেণির নারী অপরাধে জড়ালেও শহরের বস্তিবাসী ও গ্রামের গরিব নারীদের অপরাধে বেশি জড়াতে দেখা যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জিয়া রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনুন্নত দেশে নারী অপরাধীদের ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন করা হচ্ছে আমাদের দেশে। আবার কাজের ক্ষেত্র কম থাকায় বাংলাদেশের নারীরা টাকা উপার্জনে পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে আছে। এ জন্য সামান্য কিছু টাকার লোভে নারীরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

মাদক ব্যবসা : পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, দেশের মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৩০ শতাংশই নারী। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী আবার মাদকের গডফাদার হিসেবেও তালিকাভুক্ত। তবে নারীদের সবচেয়ে বেশি মাদক বহনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু রাজধানী ঢাকায় ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অর্ধশতাধিক নারী। এমনকি সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কাছে আছে অন্তত ২৫ জন তালিকাভুক্ত নারী মাদক ব্যবসায়ীর নাম। এর মধ্যে অনেকেই পলাতক। আবার কয়েকজন কারাগারে। মে মাসে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানের সময় ময়মনসিংহ সদরের সানকিপাড়ার গেণ্ডাপাড়া এলাকায় রেহানা নামে এক নারী মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। রেহানা পারিবারিকভাবে পাঁচ বছর ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে সাধারণ এলাকাগুলোতে অসচ্ছল নারীদের পাশাপাশি আধুনিক-শিক্ষিত নারীরাও এখন মাদক বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত। এদের অনেকেই আছেন যারা স্বামীর চাপে পড়ে কিংবা তার অবর্তমানে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন।

প্রতারণার ফাঁদ : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে চক্রটি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে প্রথমে সখ্য গড়ে তোলে। এরপর ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে প্রেমের মিথ্যা সম্পর্ক গড়ে তুলে একপর্যায়ে অপরাধী সেই নারী চক্র ভুক্তভোগীকে বাসায় ডেকে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। এই অবৈধ মেলামেশার ছবি তারা গোপনে ভিডিও করে রাখে। পরে সেই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের ব্ল্যাকমেইল করে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। ভুক্তভোগীরা এমন দুই নারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে গত বছরের শেষের দিকে মোহাম্মদপুর থেকে দুই নারীকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এ ছাড়াও কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগের আরেক মাধ্যম ইমোতেও প্রতারণার ফাঁদ পেতে শিক্ষার্থীসহ তরুণদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে আরেকটি চক্র। এরপর সেই তরুণদের সঙ্গে ইয়াবা খাওয়া ও সময় কাটানোর জন্য দুই-তিন হাজার টাকা দাবি করে।

জঙ্গিবাদে নারী : সাম্প্রতিক সময়ে নারীরা কেউ কেউ স্বামীদের প্ররোচনায় এবং কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। গত বছরের ১৪ এবং ১৫ আগস্ট গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকা, রাজধানীর মগবাজার ও মিরপুর এলাকা থেকে চার নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। এই চারজনের মধ্যে ছিল নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির নারী বিভাগের উপদেষ্টা আকলিমা রহমান। র‌্যাব-পুলিশের দেওয়া তথ্যে, জেএমবির নারী জঙ্গিরা মূলত অর্থ ও সদস্য সংগ্রহ করে। কিছু ক্ষেত্রে কোনো নাকশতা ঘটানোর পূর্বে সে স্থানের রেকি করেন এবং নাশকতায় পুরুষ সদস্যদের সাহায্য করেন।

জাল টাকার কারবার : ২৬ জুন কুমিল্লার চান্দিনা ইসলামী ব্যাংক থেকে ৯৯ হাজার টাকা জাল নোটসহ ফেরদৌসি বেগম (৪৫) নামে জালিয়াত চক্রের সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। নারীদের দিয়ে জাল টাকা তৈরির উপাদান সংগ্রহ করা সহজ হওয়ায় এ কাজে তাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর