রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
আইন আদালত

সরকারি কাজে স্বজনপ্রীতি বন্ধে আইন আসছে

আরাফাত মুন্না

এবার সরকারি কাজে স্বজনপ্রীতি ঠেকাতে জেল-জরিমানার বিধান রেখে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ‘স্বার্থ সংঘাত প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা আইন’ শিরোনামে এ-সংক্রান্ত একটি আইনের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেছে আইন কমিশন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুরোধে খসড়া তৈরি করে তা আইন কমিশনের ওয়েবসাইটে সর্বসাধারণের মতামতের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছেও খসড়াটি পাঠানো হয়েছে।

খসড়ায় আইন অমান্যে দণ্ডকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ফৌজদারি অপরাধের উদ্দেশ্যে এ আইন লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। কারাদণ্ডের সঙ্গে অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধানও রয়েছে খসড়া আইনে। খসড়ায় কোম্পানির অপরাধের বিষয়ে বলা হয়েছে, আইন লঙ্ঘনকারী কোম্পানির অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম চালানো যাবে।

আইন কমিশন সূত্র জানায়, সরকারের বড় বড় প্রকল্পের কর্তাব্যক্তিদের পাশাপাশি নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তিদের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে তারা বা তাদের ঘনিষ্ঠজনরা অনেক সময় লাভবান হন। কিন্তু বাহ্যিকভাবে তা দেখা যায় না। নিজের পদ বা ক্ষমতা ব্যবহার করে অন্যকে সুবিধা দেওয়া এবং নিজে লাভবান হওয়ার মাধ্যমে তারা যে দুর্নীতি করেন, তাকে আইনের আওতায় নেওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করতে নতুন এ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ আইন বাস্তবায়ন হলে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে করা দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশা তাদের। খসড়া আইনে স্বার্থ সংঘাতবিষয়ক সম্ভাব্য পরিস্থিতির উদাহরণসমূহ বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে থাকার সময় যোগাযোগ ছিল কোনো এনজিওতে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার ১২ মাসের মধ্যে যোগদান স্বার্থ সংঘাত হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া সরকারি কোনো প্রকল্পে দায়িত্ব পালনের সময় কোনো কর্মকর্তার সন্তান দরপত্রে অংশ নেওয়ার পর, দরপত্র না পেলেও সেটা অপরাধ হবে। কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পক্ষ থেকে চিকিৎসককে কমিশন প্রদান বা বিভিন্ন উপহার প্রদানও এ আইনের আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইন কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা ফউজুল আজিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুদকের অনুরোধে আমরা আইনের প্রথম খসড়া তৈরি করে দুদকের কাছে দিয়েছি। আমাদের ওয়েবসাইটেও আছে। বিভিন্ন পক্ষের কাছে মতামতের জন্য দেওয়া হয়েছে। এখন সবার মতামত পাওয়ার পর আইনের চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দুদকে পাঠানো হবে। এ আইনটি বাস্তবায়ন হলে স্বজনপ্রীতি ও স্বার্থ সংঘাতসংক্রান্ত দুর্নীতির পথগুলো বন্ধ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আইনের খসড়ায় ‘স্বার্থ সংঘাত’ সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সরকারি বা বেসরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা নিয়োজিত পরামর্শক বা উপদেষ্টারা তাদের সংশ্লিষ্ট কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনকালে কী কী পরিস্থিতির উদ্ভব হলে স্বার্থের সংঘাত ঘটবে, তা তুলে ধরা হয়েছে।

 খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারি বা বেসরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বা নিয়োজিত পরামর্শক বা উপদেষ্টাদের কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ তাদের দায়িত্ব পালনকে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করলে স্বার্থ সংঘাত ঘটবে। এ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অবৈধ বা পরোক্ষ লাভের সুযোগ তৈরি হলে অথবা স্বার্থের সংঘাতের কারণে কোনোরূপ অনৈতিক বা অন্যায় ফলাফল তৈরি হতে পারে। খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যদের কোনো বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন বা পরিচিত কেউ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে না।

সর্বশেষ খবর