শুক্রবার, ২৭ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

সীমান্তে বসছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি

অস্ত্র-মাদক চোরাচালান ঠেকাতে বিজিবির নানা কৌশল

আনিস রহমান

বাংলাদেশ সীমান্তের ভারত ও মিয়ানমার অংশের বেশকিছু এলাকা দিয়ে চোরাচালান হয় অবৈধ অস্ত্র, মাদকসহ নানা উপকরণ। এসব চোরাচালান ঠেকাতে নানা কৌশল নিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ইতিমধ্যে তারা সীমান্তের ৩২৮ কিলোমিটার এলাকা চোরাচালানপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এসব এলাকায় চোরাচালান বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে কাজ শুরু করেছে বিজিবি। এরই অংশ হিসেবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্যকর সীমান্ত ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বর্ডার সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ভারত-মিয়ানমার সংলগ্ন ৩২৮ কিলোমিটার স্পর্শকাতর সীমান্তে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে বেশ দ্রুতগতিতে।

সূত্র জানায়, সীমান্ত সুরক্ষায় প্রতিবেশী দেশগুলোয় সীমান্ত সড়ক থাকলেও বাংলাদেশ সীমান্তে রোড না থাকায় টহলে বেগ পেতে হয় বিজিবি সদস্যদের। রোড না থাকার কারণে যে কোনো ধরনের ঘটনা ঘটলে বা এর খবর পেলেও বিজিবি সদস্যরা খুব দ্রুত সেখানে পৌঁছতে পারেন না। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিজিবির সক্ষমতাও। তাই চোরাচালানপ্রবণ সীমান্ত এলাকা পুটখালীতে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হয়েছে আধুনিক বর্ডার সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম। ইতিমধ্যে বিজিবি ও বিএসএফের যৌথ প্রচেষ্টায় যশোরের পুটখালী ও দৌলতপুর সীমান্ত এবং বিপরীতে ভারতের কাল্যাণী ও গুনারমঠ সীমান্ত এলাকার ৮ দশমিক ৩ কিলোমিটার সীমান্ত ক্রাইম ফ্রি জোন ঘোষণা করা হয়েছে। ক্রাইম ফ্রি জোন ঘোষিত সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে বিজিবি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, সার্চলাইট, থারমার ইমেজার স্থাপন করেছে। বর্তমানে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ১০ কিলোমিটার এলাকায় এ সিস্টেম স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী বছর নাগাদ কক্সবাজারের মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা, নওগাঁর হাপানিয়া সীমান্ত, দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলে বর্ডার সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম স্থাপনের কাজ শেষ হবে। বিভিন্ন সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের কয়েকটি স্থান দিয়ে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক বিশেষ করে ফেনসিডিল চোরাচালান হয়। এ ছাড়া মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত আসছে ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবা। মিয়ানমার সীমান্তটি পাহাড়, জঙ্গল ও নদীবেষ্টিত হওয়ায় সেখানে এসব চোরাচালান বন্ধ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, সার্চলাইট, থারমার ইমেজার স্থাপনের ফলে সীমান্তে অপরাধ প্রতিরোধে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। তাই পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সীমান্তেও ক্রাইম ফ্রি জোন সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, বর্ডার সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ৩২৮ কিলোমিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এ এলাকাজুড়ে বিজিবির নজরদারি নিশ্চিত করতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি বর্ডার সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে থারমাল ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা, রাডার, সেন্সরযুক্ত বিভিন্ন যন্ত্র ও সমন্বিত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক। বর্ডার সার্ভেইলেন্সের পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুর্গম সীমান্তে রেসপন্স টিম পৌঁছানোর লক্ষ্যে যে কোনো ধরনের স্থলসীমান্তে চলাচল উপযোগী অল টেরেইন ভেহিকেল এবং দুর্গম জল বা নৌসীমান্তের জন্য হাইস্পিড বোট কেনা হচ্ছে। বর্ডার সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেমের মাধ্যমে নেটওয়ার্কভুক্ত সীমান্তে সংশ্লিষ্ট কমান্ড পর্যায় থেকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করা সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্ট ইউনিট ছাড়াও কেন্দ্রীয়ভাবে সার্ভেইল্যান্স সিস্টেমের মাধ্যমে সীমান্তের নজরদারির লক্ষ্যে বিজিবি সদর দফতর পিলখানায় সর্বাধুনিক কমান্ড সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।

এ অবস্থায় অস্ত্র, মাদকসহ সব ধরনের চোরাচালান ও সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে বিশেষ সহায়ক হবে বলে তারা মনে করছেন।

সর্বশেষ খবর