শুক্রবার, ২৭ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

মহাস্থানে মিলেছে পাল সাম্রাজ্যের নিদর্শন

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

মহাস্থানে মিলেছে পাল সাম্রাজ্যের নিদর্শন

প্রায় ১২০০ বছর আগের নির্মাণ করা বাড়ি-ঘর, শস্য মজুদ রাখার তৈজসপত্র, পোড়া মাটির ভগ্নাংশ পাওয়া গেল বগুড়ার মহাস্থানগড়ে। মহাস্থানগড়ের জাহাজঘাটা এলাকার একটি স্থানে ও বৈরাগীর ভিটা এলাকার দুটি স্থানে দেড়মাস খনন করার পর মিলেছে পাল সাম্রাজ্যের সময়কালের মন্দিরসদৃশ, পোড়ামাটির ফলক, পানি পানের কূপ, ঘর আকৃতির অবকাঠামো। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের উদ্যোগে খননকালে এসব নিদর্শনের সন্ধান মেলে। বগুড়ার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মহাস্থানগড় ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে খনন করা হয়েছে। খননের বিভিন্ন পর্যায়ে এখানে বেরিয়ে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রত্ননিদর্শন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সরকার যৌথভাবে খননকাজ পরিচালনা করে আসছে। পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর খনন পরিচালনা করছে। এবারও গড়ের জাহাজঘাটা ও বৈরাগীর ভিটার দুুটি মোট তিনটি স্থানে নিজস্ব অর্থায়নে শুরু হয়েছে খননকাজ। বৈরাগীর ভিটায় গত বছর খননের পর প্রায় ১ হাজার ৩০০ বছর আগে নির্মিত তিনটি বৌদ্ধ মন্দিরের নিদর্শন মেলে।

এবারও সেখানে ওই মন্দিরগুলোর পূর্ণ অবয়ব নিশ্চিত করতে খননের পাশাপাশি চলছে সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ। এবারও একই মন্দিরের অংশবিশেষ আরও ফুটে উঠেছে। বগুড়ার মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকায় খননে বেরিয়ে এসেছে প্রায় ১২০০ বছরের প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন। সেই সঙ্গে খ্রিস্টপূর্ব সময় থেকে শুরু করে মুসলিম শাসনামলের সমৃদ্ধ প্রত্নসামগ্রীও কিছু পাওয়া গেছে। গত ১৫ মে থেকে মহাস্থানগড়ে এই খননকাজ শুরু হয়। শেষ হয়েছে ৩০ জুন। প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগরী ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান মহাস্থান গড়ে খননে প্রাপ্ত প্রত্নসামগ্রী নিশ্চিত করেছে মহাস্থানগড় প্রাচীন যুগেও ঐতিহ্য, সংস্কৃতিতে ছিল সমৃদ্ধ। মহাস্থানগড়ের জাহাজঘাটা খননকাজের দলনেতার সাদেকুজ্জামান জানান, জাহাজঘাটার মধ্যভাগে খননে বেরিয়ে এসেছে ঘনবসতির নিদর্শন। সেখানকার মাটির তলদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ মৃৎপাত্রের টুকরো উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া সরু পথের নিদর্শনের পাশাপাশি বসতবাড়ির চিহ্ন মিলেছে সেখানে। ধারণা করা হচ্ছে সেখানে এককালে জনবসতি ছিল। সে সময় মাটির হাঁড়ি পাতিল ব্যবহার হতো। খননকালে সেখানে স্থাপত্য শৈলীর পাশাপাশি বেশকিছু প্রত্নবস্তুরও সন্ধান মিলেছে। তার মধ্যে রয়েছে উত্তরাঞ্চলীয় উজ্জ্বল চকচকে কালো মৃৎপাত্র (এনবিপিডব্লিউ), বিভিন্ন যুগের মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ, পোড়া মাটির বাটি ও পোড়ামাটির গুটিকা। তিনি বলেন, সেখানে যেসব প্রত্নবস্তুর নমুনা মিলেছে তা প্রমাণ করে খ্রিস্টের জন্মের পূর্বেও এই জনপদ ছিল সমৃদ্ধ। এবার খননের পর সংস্কার করে বৈরাগীর ভিটা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর।

সর্বশেষ খবর