আজ বিশ্ব হাতি দিবস। নানা কারণে বিলুপ্তির পথে বাংলাদেশের হাতি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থলচর বন্যপ্রাণী হলো হাতি। পাশাপাশি অন্যতম প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক প্রজাতি। হাতির দেহ বিশালাকার। পূর্ণবয়স্ক একটি হাতির ওজন ৩ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। দেহের দৈর্ঘ্য ৬৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। এদের কান বেশ চওড়া হয়। দেহের তুলনায় চোখের আকার ছোট। দেহের চামড়া কোঁচকানো এবং ধূসর রঙের। হাতি দেহের বৈচিত্র্যপূর্ণ অংশ হলো শুঁড়। এদের নাক বর্ধিত হয়ে শুঁড়ে পরিণত হয়। এ শুঁড় অত্যন্ত শক্তিশালী ইন্দ্রিয় হিসেবে কাজ করে। কোনো কিছু তোলা, ধরা, ঘ্রাণ নেওয়া, শরীর পরিষ্কার করা, পানি ধরে রাখা ইত্যাদি কাজে এরা শুঁড় ব্যবহার করে থাকে। শুঁড় দিয়ে অনায়াসেই ২৭০ কেজি পর্যন্ত ওজন তুলতে পারে। পোকামাকড় থেকে রক্ষা ও দেহের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে বেশির ভাগ সময় এরা দেহে মাটি মাখিয়ে রাখে। পানি ও মাটি নিয়ে খেলা করতে পছন্দ করে। এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বন্য অবস্থায় হাতির সংখ্যা মাত্র ২৫০টি। এ ছাড়া কিছু হাতি পাশের দেশ ভারতের আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করে।
হাতি তৃণভোজী প্রাণী। এরা রাত-দিন সব সময়ই খাবারের খোঁজে একস্থান থেকে অন্যস্থানে ঘুরে বেড়ায়। গাছের পাতা, বাঁশ, কলাগাছ, লম্বা ঘাস, ফুল, নারিকেল গাছের কচিপাতা ইত্যাদি খেয়ে থাকে। প্রতিদিন একটি পূর্ণবয়স্ক হাতি প্রায় ১৫০ কেজি খাবার খায় এবং ৮০ থেকে ১২০ লিটার পানি পান করে। বেশির ভাগ সময় এরা দল বেঁধে চলাচল করলেও কখনো কখনো পুরুষ হাতিকে দলছুট অবস্থায় দেখা যায়। হাতির প্রজনন কাল মার্চ থেকে জুন মাস। গর্ভধারণকাল প্রায় ২২ মাস। সাধারণত এরা দুই থেকে চার বছর পর পর একটি বাচ্চার জন্ম দেয়। পৃথিবীতে বর্তমানে হাতির দুটি প্রজাতি বেঁচে আছে। এশীয় হাতি ও আফ্রিকা মহাদেশে বসবাসকারী আফ্রিকান হাতি। একটি হাতির দাঁত প্রায় ১.৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এবং একজোড়া দাঁতের ওজন হয় প্রায় ৭০ কেজির মতো। এই দাঁতের চাহিদার জন্যই আমাদের দেশ তথা পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে হাতি। পৃথিবী জুড়ে হাতির দাঁতের অবৈধ ব্যবসা নিষিদ্ধ হলেও চোরা শিকারিরা তা মানছে না। এরা অর্থের লোভে প্রতিনিয়ত হাতি শিকার করছে। হাতির দাঁতের বিভিন্ন শিল্পকর্ম জনপ্রিয়। হাতির দাঁত দিয়ে সিংহাসনের পা, আসবাবপত্র এবং মন্দির সাজানোর কাজ করা হয়। এখনো হাতির দাঁতের তৈরি বিভিন্ন ধরনের সৌখিন জিনিসপত্র এবং অলঙ্কার সর্বজন সমাদৃত। মানুষের বিলাসিতায় অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছে প্রকৃতির এই সৃষ্টি। বর্তমানে উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার হাতির আবাসস্থল ঝুঁকিতে। এ ছাড়া এ প্রাণীর বিচরণক্ষেত্র আর দরকার পর্যাপ্ত খাবার, পানি ও বিশ্রামের জায়গা। ক্রমাগত মানুষের আবাসভূমির বিস্তার, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ফসলি জমির বিস্তার, বনজ সম্পদের অতি আহরণ, পাহাড় কাটা, অপরিকল্পিতভাবে বনের মধ্যে রাস্তা নির্মাণ এবং বনসংলগ্ন নদীতে বাঁধ নির্মাণ এদেশে হাতির অস্তিত্বকে বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। হাতিকে বন্য পরিবেশ থেকে বিলুপ্তি রোধে সরকারি-বেসরকারি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বড় বেশি প্রয়োজন। এশীয় হাতির অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। বাংলাদেশের মধুপুর গড় থেকে শুরু করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও নোয়াখালী এলাকায় একসময় হাতির অবাধ বিচরণ ছিল। বাসস্থান ধ্বংস, বন উজাড়, জনসংখ্যার চাপ, সংরক্ষণের অভাব, খাদ্যের অভাব ও চলাচলের পথে বাধার কারণে আমাদের দেশে হাতি এখন একটি বিপন্ন প্রাণী।