জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নজর এখন নির্বাচনকালীন সরকারে। অক্টোবরের শেষে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা রয়েছে। আর এই নির্বাচনকালীন সরকারে জাতীয় পার্টি অন্তত সাতজনকে মন্ত্রিসভায় রাখতে চায়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনকালীন সরকারে জাতীয় পার্টির তিনজন মন্ত্রী ও একজন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ছিলেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির তিনজন মন্ত্রী রয়েছেন। এদের তিনজনসহ আরও চারজন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে চান। সূত্র জানায়, এ তালিকায় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু থাকতে পারেন। এ ছাড়াও টেকনোক্র্যাট কোটায় জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নতুন ইমেজের মুখও নির্বাচনকালীন সরকারে থাকতে পারেন। এজন্য চলছে লবিং।
জানতে চাইলে পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারে জাতীয় পার্টির অবস্থান কী হবে সে সিদ্ধান্ত নেবেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দল ও দেশের স্বার্থে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার পার্টির চেয়ারম্যানের রয়েছে। নেতা-কর্মীদের পল্লীবন্ধু এরশাদের প্রতি সেই আস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এখন ব্যস্ত এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য। তবে রাজনীতিতে তো শেষ কথা বলে কিছু নেই। পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে পার্টির চেয়ারম্যান যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। জানা যায়, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদের অধিবেশনের অব্যবহিত পরেই গঠিত হবে নির্বাচনকালীন সরকার। দলের একটি অংশ চায় বর্তমান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। দলের অপর আরেকটি শক্তিশালী অংশ চান বর্তমান মন্ত্রিসভায় যারা আছেন তারা চলে যাবেন। নতুন তিনজনের পাশাপাশি বিরোধীদলীয় নেত্রীর আস্থাভাজন ফখরুল ইমাম এবং একাধিক নারী থাকবেন। ‘যে কোনো সময় মন্ত্রিসভা থেকে আমরা পদত্যাগ করব’ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভা গঠনের ছয় মাস পর থেকেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান একথা একাধিকবার বলেছেন। একই সঙ্গে তার স্ত্রী সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদও সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘অচিরেই মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে আসবে জাতীয় পার্টি’। এমনকি গত বছর জাপার সংসদীয় কমিটির বৈঠক করেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে আসার। কিন্তু সরকারের মেয়াদ শেষ হতে চললেও মন্ত্রিসভা ছাড়েনি জাতীয় পার্টির কোনো সদস্য। এই নিয়ে পার্টিতে এখন কোনো ধরনের আলোচনাই নেই। বরং আসন্ন নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির সদস্য সংখ্যা কীভাবে বাড়ানো যায়, সে জন্য জাপার নীতিনির্ধারকরা কাজ করছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে নির্বাচনকালীন সরকারের বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি থেকে অন্তত পাঁচজন মন্ত্রী করার ব্যাপারে সরকারি মহলেও ইতিবাচক আলাপ-আলোচনা চলছে বলে আওয়ামী লীগ ও জাপা শিবিরে গুঞ্জন রয়েছে।
জানা গেছে, সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি থেকে অন্তত পাঁচজন এই মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হতে পারে। বর্তমান জাপার তিনজন মন্ত্রী থেকে যে কোনো একজন বাদ পড়তে পারেন। আর নতুন সদস্য হিসেবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে পারেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এই তিনজনই এরশাদ সরকারের সময় মন্ত্রী ছিলেন। তাছাড়া জাপার সিনিয়র নেতাদের তালিকায়ও তারা রয়েছেন শীর্ষ পর্যায়ে। তাই নির্বাচনকালীন সরকারে জাপার মন্ত্রী সংখ্যা বাড়লে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের ঠাঁই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানা গেছে।এই ব্যাপারে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারে জাতীয় পার্টির কেউ মন্ত্রিসভায় থাকবে কিনা বা থাকলেও কে কে থাকবেন, সে ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। এদিকে জাতীয় পার্টির একজন নীতিনির্ধারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ তো দূরের কথা। উল্টো কীভাবে মন্ত্রীর সংখ্যা বাড়ানো যায়, স্যার ও ম্যাডাম সেই চেষ্টায় আছেন। এই ক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকারে অন্তত সাত থেকে আটজন মন্ত্রী চায় জাতীয় পার্টি। এদিকে শুধু নির্বাচনকালীন সরকারে নয়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট করেই নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি।