‘বিশেষ কোটায় ফাহিম জাহান দৃষ্টি নামে এক শিক্ষার্থীর ভর্তির সুব্যবস্থা করার জন্য জোর সুপারিশ করছি।’ শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) ভর্তি করানোর একটি আবেদনপত্রে এভাবেই সুপারিশ করে স্বাক্ষর করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা। একই আবেদনপত্রে ডেপুটি স্পিকারসহ আরও পাঁচজনের সুপারিশ করা স্বাক্ষর রয়েছে। মোছা. হাছিনা বেগম (৬০) নামে এক মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এ সুপারিশপত্র নিয়ে যান। কিন্তু সুপারিশপত্রটি দেখে সন্দেহ হয় কর্তৃপক্ষের। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ হাছিনা বেগমকে গ্রেফতার করে। তিনি স্বীকার করেন, দীর্ঘদিন ধরেই স্বাক্ষর জাল করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতারণার মাধ্যমে কাজ করে আসছেন। পুলিশ বলছে, এরা সুপারিশ চক্র। সারা দেশে এমন সুপারিশ চক্র সক্রিয়। যাদের কাজ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্বাক্ষর জাল করে বিভিন্ন কাজ আদায় করে নেওয়া। শেকৃবিতে ২০১৬-১৭ সেশনে প্রথম বর্ষে এক শিক্ষার্থীকে ভর্তি শুধু নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে এরা। জানা যায়, মোছা. হাছিনা বেগম প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরসংবলিত একটি ডিও লেটার নিয়ে শেকৃবি ভিসি প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিনের কক্ষে যান। এতে প্রথমে তিনি গণভবনের বাবুর্চি বলে পরিচয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরসংবলিত একটি ডিও লেটার এবং ডেপুটি স্পিকার, গোপালগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব শফিকুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রটোকল অফিসার মনজিলা ফারুকের স্বাক্ষরসংবলিত সুপারিশ কাগজ ভিসির কাছে দেন। সুপারিশপত্রের ভাষ্য ছিল, ‘বিশেষ কোটায় ফাহিম জাহান দৃষ্টি নামে এক শিক্ষার্থীর ভর্তির সুব্যবস্থা করার জন্য জোর সুপারিশ করছি।’ এতে উল্লেখিত শিক্ষার্থীকে অসুস্থ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ভিসির কাছে পেশ করা মহিলার সব কাগজের স্বাক্ষরসহ কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হওয়ায় শেকৃবি প্রশাসন মহিলাকে আটক করে শেরেবাংলানগর থানায় সোপর্দ করে। আটকের পর এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শেকৃবি ভিসি বলেন, ‘আটক মহিলা এর আগেও আমার কাছে তিন-চারবার এসে ফাহিম জাহান দৃষ্টি নামে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থীর ভর্তির তদবির করেন। তাতে আমি কোনো কর্ণপাত না করলে সর্বশেষ আমার কাছে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরসংবলিত একটি ডিও লেটার নিয়ে হাজির হন। এতে ঘটনাটি আমার কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এটি একটি ভুয়া আবেদন। কেননা প্রধানমন্ত্রীর কোনো ডিও লেটার কোনো ভিসির কাছে আসতে পারে না। এ ছাড়া আবেদনপত্রে নানা ধরনের ভুল ছিল। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরটিও ছিল আমার কাছে অস্পষ্ট। অন্যদিকে আটক হাছিনা বেগম নিজেকে গণভবনের বাবুর্চি হিসেবে পরিচয় দেন।’