কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে মৌসুমি ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে। অধিক আয়ের আশায় বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসা শুরু হয়েছে মৌসুমি ভিক্ষুকদের। পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিরা মনে করছেন, আর্থিক সচ্ছলতার উদ্দেশ্যে শহরকেন্দ্রিক ভিক্ষা করা অনেকেরই রীতিমতো পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পেশায় পুঁজি নেই এবং হাত পাতলেই ভিক্ষা পাওয়া যায় বলে অনেকেই এ ধরনের আয়ে ঝুঁকে থাকেন। ঈদের মতো বড় ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে ঢাকার বিভিন্ন ট্রাফিক সিগন্যালে মৌসুমি ভিক্ষুকদের আনাগোনা অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়েছে। মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের ট্রাফিক সিগন্যালে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলা থেকে আসা রাবেয়া বেগম বলেন, গতকাল ঢাকায় এসেছি। শহরে ভিক্ষা করে অনেক কামাই করা যায় একথা শুনে আমিও আসলাম। এ কয়দিন ভিক্ষা করে ঈদের দুই দিন পর গ্রামে ফিরে যাব। রাবেয়া বেগম একা আসেনি গ্রাম থেকে। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন মহিলা ভিক্ষুক এসেছে। রাজধানীর অভিজাত এলাকা নামে খ্যাত বনানী এলাকায়ও দেখা যায় তাদের। এরা সকালে আসেন আবার দুপুরে চলে যান অস্থায়ী ডেরায়। এরপর আবার বিকালে অফিস ছুটির সময় আসেন। রাবেয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা একই সঙ্গে ভাটারা এলাকায় থাকেন। দিনে কতো আয় হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, একেক দিন একেক রকম। কোনোদিন ৩০০ আবার কোনোদিন ৬০০-৭০০ টাকাও আয় হয়। রাবেয়া জানান, গ্রামে কাজ নেই বলেই ঢাকার উদ্দেশ্যে ঈদ মৌসুমে আসা। রাবেয়ার মতো প্রতিদিন কয়েকশ মানুষ ঢাকায় আসেন। এদের সবাই মৌসুমি ভিক্ষুক। কারওয়ান বাজার এলাকার ভিক্ষুক হাসেমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার মতো অনেকেই আসেন সিজন বুঝে। হাসেম এসেছেন গতকাল। তার বাড়ি ময়মনসিংহ। ফিরে যাবেন ঈদের পরদিন। এ কয়দিন হাসেম মিরপুরের শহীদ বৃদ্ধিজীবী কবরস্থানের সামনে ভিক্ষা করবেন। সেখানে আরও ১০/১২ জন ভিক্ষা করেন। এদের শতকরা ৯০ ভাগই ঈদ উপলক্ষে এসেছেন। সমাজসেবা অধিদফতর সূত্র জানায়, ভিক্ষা বৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’ কর্মসূচির আওতায় ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় ভিক্ষুক জরিপ। রাজধানীর ৪০০ পয়েন্টে ১০ হাজার ভিক্ষুকের ওপর এই জরিপ চালানো হয়। ১০ হাজার ভিক্ষুকের মধ্যে ২ হাজার ভিক্ষুককে প্রাথমিকভাবে পুনর্বাসন করার কথা ছিল তখন। কিন্তু তা আর এগোয়নি। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, দেশে ৬ লাখের মতো ভিক্ষুক রয়েছে। সমাজ সেবা অধিদফতরের পরিচালক (কার্যক্রম) আবু মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন প্রকল্প এখন চলছে জেলা প্রশাসকদের সহায়তায়। প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা এ ব্যাপারে এলাকায় প্রোগ্রাম করবে এবং ব্যবস্থা নেবে। ভিক্ষুকদের তালিকা প্রণয়ন করবে। তিনি বলেন, মহানগরীর ভিআইপি এলাকায় মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে ভিক্ষুকমুক্ত রাখার চেষ্টা করি। আপাতত সংখ্যা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।