রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

কর্ণফুলী টানেলের কাজ শেষ ২৪ শতাংশ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

স্বপ্নপূরণের দিকে এগিয়ে চলেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল। এরই মধ্যে টানেল নির্মাণকাজের ২৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী অক্টোবরে টানেল খননের জন্য বোরিং মিশন যুক্ত হলে কাজের গতি পাবে অনেক গুণ। স্বপ্নের এ টানেলের নির্মাণকাজ শেষ হলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’-এ পরিণত হবে চট্টগ্রাম। একই আন্তদেশীয় সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার পরিকল্পনা ত্বরান্বিতসহ আমূল পরিবর্তন আসবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়।

কর্ণফুলী টানেলের সার্বিক অগ্রগতি বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বোরিং মেশিন আসায় টানেলের কাজে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। অক্টোবরে বোরিং মেশিন কাজ শুরু করবে। এখন টানেলের সার্বিক কাজের ২৪ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘টানেলের মডেল সাংহাইয়ের মতো “ওয়ান সিটি টু টাউন” স্টাইলে করা হয়েছে। নদীর এপারেও থাকবে একটা সিটি, ওপারেও একটা পরিকল্পিত সিটি গড়ে উঠবে। এ প্রকল্পে কিন্তু ওপারেও কমার্শিয়াল ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল নগরায়ণ হবে।’ জানা যায়, দেশের প্রথম এ টানেলের নির্মাণকাজ শেষ হলে পাল্টে যাবে দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনৈতিক চিত্র। আমূল পরিবর্তন আসবে চট্টগ্রামের যোগাযোগব্যবস্থায়। নিরবচ্ছিন্ন ও আধুনিক মানের হবে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা। নতুন যোগাযোগব্যবস্থা সৃষ্টি হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে। ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং প্রদেশ পর্যন্ত সরাসরি আন্তদেশীয় মহাসড়ক তৈরির যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে তাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ টানেল। গতি পাবে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজে। বৃদ্ধি পাবে দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা। চীনের সাংহাইয়ের মতো ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে নির্মাণ করা হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল। গত বছর ডিসেম্বরে শুরু হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় গণনা, যার সম্ভাব্য নির্মাণ সময় ধরা হয়েছে পাঁচ বছর। টানেলটির কাজ শেষ হলে আধুনিক নগরের কাতারে উঠবে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের টানেলটি হবে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কর্ণফুলী নদীর ২ কিলোমিটার ভাটিতে। নদীর তলদেশ দিয়ে এ টানেল হবে চার লেনের। মূল টানেল হবে দুটি টিউবসহ ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক থাকছে। সঙ্গে হবে ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজ। টানেলটি নির্মাণ করা হবে ‘শিল্ড ড্রাইভেন মেথড’ পদ্ধতিতে।

২০১৩ সালে কর্ণফুলী টানেলের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শেষে তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বেইজিংয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। একই বছর চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানির (সিসিসিসি) সঙ্গে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের চুক্তি হয়। ২০১৫ সালের ৩০ জুন সিসিসিসির সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের ভিত্তিফলক উদ্বোধন করেন। আগামী অক্টোবরের শেষ নাগাদ চীন থেকে সংগৃহীত টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) চালুর মাধ্যমে টানেলের খননকাজ শুরু হবে। বর্তমানে টিবিএম চালুর প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলছে। কর্ণফুলী টানেলের উপ-প্রকল্প পরিচালক (প্রশাসন) ড. অনুপম সাহা বলেন, ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত করাসহ সাতটি উদ্দেশ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে চার লেনের সড়ক টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। যে গতিতে কাজ হচ্ছে, আশা করা যায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই টানেলের নির্মাণকাজ শেষ করা যাবে।

সর্বশেষ খবর