বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

হয়নি পার্বত্য জোন

কবির হোসেন সিদ্দিকী, বান্দরবান

১২ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি পার্বত্য চট্টগ্রামকে পর্যটন জোন হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা। ২০০৭ সালে তৎকালীন সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক্সক্লুসিভ পর্যটন জোন হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিল। দেশের পর্যটন ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনাময় জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম। তিন জেলার মধ্যে বান্দরবানে রয়েছে প্রাকৃতিক ঝরনা, পাহাড়ের ওপর লেক, দিগন্ত ছোঁয়া পাহাড়, রাঙামাটির কাপ্তাই লেক, খাগড়াছড়ির আলুরটিলা, চাকমা, মারমা, ম্রো, বমসহ ১১ আদিবাসীর বৈচিত্র্যময় কৃষ্টি-সংস্কৃতি।

পাহাড়-খরস্রোতা নদীর আর দিগন্ত-জোড়া সবুজ বনানী এসব কিছু মিলিয়ে যে কোনো মানুষকে কাছে টানতে সক্ষম পার্বত্য চট্টগ্রাম। অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এখানে গড়ে ওঠেনি পর্যটনের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় হোটেল মোটেলসহ অন্যান্য অবকাঠামো। ফলে প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমালেও থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় তারা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বান্দরবানের মেঘলায় রয়েছে একই স্থানে দুটি ঝুলন্ত সেতু, যা দেশের অন্য কোথাও নেই। মেঘলায় আরও রয়েছে মিনি সাফারি পার্ক, শিশুপার্ক, প্রাকৃতিক লেক, চিড়িয়াখানা, চা বাগানসহ পর্যটকের মন ভোলানো সব আয়োজন। এ ছাড়া শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে নীলাচল ‘পর্যটন স্পট’ যেখানে পাহাড়ের সঙ্গে আকাশ গড়ে তুলেছে মিতালি। দেশি-বিদেশি যে কোনো পর্যটক স্পটটিতে গিয়ে মুগ্ধ হতে বাধ্য। অথচ স্পটটিতে প্রয়োজনীয় সুবিধা এখনো গড়ে ওঠেনি।

এ ছাড়া এ জেলায় রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বিজয় (স্থানীয় ভাষয় তাজিংডং), দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ক্যাওক্রাডংসহ অসংখ্য পাহাড়। রয়েছে বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড়। যেখানে অনায়াসে মেঘের ছোঁয়া পাওয়া যায়। এটি একটি স্বাস্থ্যকর স্থানও বটে। এ ছাড়া রুমা উপজেলায় রিজুক ঝরনা নিজস্ব গতিতে সব মৌসুমেই থাকে সচল।

 জেলা শহরের অদূরে শৈলপ্রপাতের স্বচ্ছ পানি বয়ে চলছে অবিরাম ধারায়। কিন্তু নেই পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় মেঘলায় একটি পর্যটন মোটেল গড়ে উঠলেও নির্মাণকাজে ত্রুটির জন্য এটি এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হলিডে ইন, মিলনছড়ি রিসোর্টসহ বেশ কয়েকটি অভিজাত হোটেল গড়ে উঠলেও তা পর্যটকের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। পর্যটন মৌসুমে শুধু থাকা-খাওয়ার অসুবিধার কারণে অসংখ্য পর্যটক বান্দরবান থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হন। এদিকে পর্যটন স্পটগুলোতে নেই পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা। বিশুদ্ধ পানির অভাব, পয়োনিষ্কাশনের অভাব এক্ষেত্রে প্রকট। ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যাবল কার প্রকল্প হাতে নিলেও বর্তমান সরকার সে প্রকল্প বাতিল করে দিয়েছে। ফলে পর্যটন শিল্পে যতটুকু সম্ভাবনা জেগেছিল তাও অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটেরও বেহাল দশা। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অভিজ্ঞ মহলের অভিমত, পর্যটনশিল্পকে কাজে লাগানো গেলে এখান থেকেই সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা আয় করতে পারে। তেমনি বেকার সমস্যাও অনেকাংশে কমে যাবে। এক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপই জরুরি। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পর্যটনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো গেলে পাল্টে যেত পারে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর