বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ওরা ভ্রাম্যমাণ অপরাধী

মির্জা মেহেদী তমাল

ওরা ভ্রাম্যমাণ অপরাধী

ভাই একটু সরে বসুন—একজন যাত্রীর এমন কথায় কল্লোল নিজের আসন থেকে সরে গিয়ে জানালার পাশে বসলেন। সেই যাত্রী তার পাশের খালি সিটে বসে পড়লেন। প্রায় এক মিনিট পরই যাত্রীটি কল্লোলকে ধাক্কাতে থাকেন। এ সময় কল্লোল তাকে সোজা হয়ে বসার অনুরোধ করেন। তখন সেই যাত্রী উল্টো তাকেই সোজা হয়ে বসতে বলেন। এক কথায় দুই কথায় তাদের মধ্যে তর্ক শুরু হয়। একপর্যায়ে তিনি চরম পরিস্থিতির শিকার হন। আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টের অ্যাকাউন্ট অফিসার কল্লোল প্রতিদিন অফিস শেষে নবীনগর-আবদুল্লাহপুর রুটের হিউমান হলারে বাসায় ফিরেন। গত সপ্তাহে বাসায় ফেরার সময় হলারের ভিতর এক যাত্রীর সঙ্গে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে সেই যাত্রী অকথ্য গালাগাল শুরু করে। এ সময় হলারের যাত্রীদের একজন তাদের ঝগড়া বন্ধ করতে পেছন থেকে সামনে আসেন। এ সময় কল্লোল তাকে বলেন, দেখেন ভাই লোকটি অযথা গালমন্দ করছে কিন্তু লোকটি কল্লোলকে উল্টো বলতে থাকেন, আপনি তো ভাই বেশি কথা বলছেন দেখলাম। এ সময় আরও তিন যাত্রী পেছন থেকে সামনে আসে। তারা সামনে এসে  কল্লোলকেই ঘিরে ধরে। তারা কল্লোলের দোষ বলে মাফ চাইতে বলেন। কিন্তু কল্লোল বলেন, কেন মাফ চাইব। আমার কাছে মাফ চাওয়া উচিত। এ কথা শুনে সেই প্রথম যাত্রীটি কল্লোলকে ধাক্কা দেন। গালে চড় মারেন। হতভম্ব কল্লোল সেই যাত্রীর হাত চেপে ধরে। ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে চলন্ত হলারের ভিতরেই কল্লোলকে ঘিরে ধরে ওই পাঁচ যাত্রী। তারা একজোট হয়ে মারধর করতে থাকে কল্লোলকে। কল্লোল এ সময় বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলেও অন্য যাত্রীদের কেউ এগিয়ে আসে না। হিউমান হলারটি তুরাগ থানা এলাকার সাহাব আলী মাদ্রাসার স্ট্যান্ডে এসে পৌঁছে, ঠিক তখনই ওই পাঁচ যাত্রী কল্লোলকে হলার থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে নেয়। তারা গ্রিন ঢাকা পরিবহনের বাস ডিপোর পেছনে নিয়ে কল্লোলকে মারধর করে। তার কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন সেট ছিনিয়ে নেয়। পরে সেখানে তাকে ফেলে রেখে সেই পাঁচজন পালিয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছে, এরা আসলে যাত্রী নয়। যাত্রীবেশী ভ্রাম্যমাণ অপরাধী। নবীনগর থেকে আবদুল্লাহপুর রুটের আশুলিয়া চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়ক এখন ভ্রাম্যমাণ অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এই ৬ কিলোমিটার সড়ক থাকে তাদের দখলে। হিউমান হলারে যাত্রীবেশী অপরাধীরা চড়ে বসে। তারা বেশ কিছু সময় নিয়ে যাত্রী টার্গেট করে। টার্গেট করা যাত্রীকে কেন্দ্র করে শুরু হয় তাদের নানা কৌশল। প্রথমে একজন তর্ক করে। এরপর যাত্রীদের মাঝে বসে থাকা একই চক্রের সদস্যরা সেই যাত্রীকে নাজেহাল করতে থাকে। পরিস্থিতি তারা এমন ভাবে তৈরি করে, যেন অন্য সাধারণ যাত্রীরাও সেই টার্গেটকৃত যাত্রীর দোষ বলেই মনে করেন। এরপর সব যাত্রীদের সামনে থেকেই টার্গেট করা যাত্রীকে নামিয়ে নেয়। ভুক্তোভোগী যাত্রী কল্লোল বলেন, ওই সড়কে একটি পুলিশের চেকপোস্টও রয়েছে। কিন্তু অপরাধীরা চেকপোস্টের আগেই হলার থেকে নেমে পড়ে। যে কারণে পুলিশও তাদের ধরছে না। প্রায় দিনই এমন ঘটনা ঘটছে। পুলিশ বলছে, যারা এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন, তাদের অবশ্যই পুলিশকে জানাতে হবে। টহল পুলিশ ছাড়াও সেখানে রয়েছে চেকপোস্ট। এ ছাড়া হলারের যাত্রীদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ এমন পরিস্থিতির শিকার হলে, অন্য যাত্রীদের তাকে সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশের সেবা ৯৯৯ এ ফোন করলে কেউ আর এমন পরিস্থিতির শিকার হবে না। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর