সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

খেলাপি ৬২ হাজার কোটি টাকার জট ছাড়াতে উদ্যোগ

আইএমএফের উদ্বেগ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

উচ্চ আদালতে বিভিন্ন রিট মামলায় আটকে থাকা প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের জট ছাড়াতে ‘বিশেষ উদ্যোগ’ নেবে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুুল মুহিতের সঙ্গে এক বৈঠকে আইএমএফ টিম খেলাপি ঋণের হাজার হাজার কোটি টাকা মামলা দিয়ে আটকে রাখার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খেলাপি ঋণের বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে রিট মামলায় খেলাপি ঋণের যে টাকা আটকে আছে সে বিষয়ে জানতে চেয়েছিল তারা। আমরা মামলাজট ছাড়াতে পৃথক বেঞ্চ গঠনে ‘বিশেষ উদ্যোগ’-এর কথা বলেছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, খেলাপি ঋণের মামলাজট ছাড়াতে পৃথক বেঞ্চ গঠনের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল এবং প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানানো হবে। তবে এর আগে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়া হবে। এর আগে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আইনমন্ত্রীর কাছেও একাধিকবার চিঠি (ডিও) পাঠিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে সেসব চিঠির পরও কোনো উদ্যোগ নেয়নি আইন মন্ত্রণালয়। গত মে মাসে আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সর্বশেষ চিঠিতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঋণের প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে বিভিন্ন ধরনের রিট মামলায়। এর মধ্যে অর্থঋণ সংক্রান্ত রিট মামলার সংখ্যা ৩ হাজার ৫৬৭টি, আর ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকা। ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) সংক্রান্ত রিট মামলা ৫১১টি, জড়িত অর্থ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য ১ হাজার ৭৯০টি রিট মামলায় ১১ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, অর্থঋণ আদালতের বেশির ভাগ রায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আসে। কিন্তু আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ঋণখেলাপিরা উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করছেন। যে কারণে খেলাপির টাকা আদায় সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর অল্প টাকায় নিয়োজিত প্যানেলভুক্ত অনভিজ্ঞ আইনজীবীর চেয়ে ঋণখেলাপিদের আইনজীবীরা অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ। এতে উচ্চ আদালতে রিটের শুনানিতে ব্যাংকের পক্ষ যুক্তিতর্কে হেরে যায়। আর এভাবেই উচ্চ আদালতের রিটে আটকে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দেশি-বিদেশি ৬৩টি ব্যাংক ও ২৯টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলে দেশের আর্থিক বাজার আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেকগুণ বড়। ফলে একদিকে যেমন খেলাপি ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে তেমনি এ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যাও বাড়ছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাবে শুধু হাই কোর্টেই অনিষ্পন্ন রিট মামলার সংখ্যা ৬ হাজারের কাছাকাছি, যাতে জড়িত অর্থের পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

সর্বশেষ খবর