মেয়ের স্বামী ও শাশুড়ির পরিকল্পনায় ঢাকার আশুলিয়ায় বাবাকে বাস থেকে ফেলে দিয়ে মেয়ে জরিনা খাতুনকে (৪৫) হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার ও বাসটি জব্দ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারকৃতরা হলেন— নিহত জরিনা খাতুনের মেয়ে রোজিনার স্বামী নূর ইসলাম (২৯), তার মা আমেনা বেগম (৪৮) এবং মামা স্বপন (৩৫)। পারিবারিক বিরোধ থেকেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয় বলে জানিয়েছেন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।
গতকাল পিবিআই সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে বনজ কুমার বলেন, জরিনা হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী ছিলেন জরিনার মেয়ের স্বামী নূর ইসলাম। অথচ তিনি নিজেই হত্যা পরিকল্পনাকারীদের একজন। এই পরিকল্পনায় আরও জড়িত ছিলেন নূর ইসলামের মা আমেনা বেগম এবং তার মামা স্বপন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে টাঙ্গাইলগামী একটি মিনিবাস ও বাসের ড্রাইভার, কন্ডাক্টর ও দুই হেলপারকে ভাড়া করে। বাসটি আগে থেকেই আশুলিয়ার শিমুলতলী বাসস্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ওই বাসে শাশুড়ি জরিনা ও জরিনার বাবাকে তুলে দেন নূর ইসলাম। পরে বাস থেকে নানা শ্বশুরকে ফেলে দিয়ে শাশুড়িকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় আরও চার আসামি এখনো পলাতক রয়েছে। তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে, গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পিবিআই প্রধান বলেন, পাঁচ বছর আগে মামা স্বপনের মধ্যস্থতায় রোজিনা ও নূর ইসলামের বিয়ে হয়। তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকত। এই বিবাদ মেটাতে প্রায় জরিনা আশুলিয়ায় আসতেন। সম্প্রতি কলহ প্রকট আকার ধারণ করে। এ জন্য নূর ইসলাম ও তার মা আমেনা বেগম ও মামা স্বপনের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে। তারা পরিকল্পনা করে জরিনাকে এমন শিক্ষা দিতে হবে যেন সে আর তাদের বাড়িতে না আসে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঘটনার দিন দুপুরে সিরাজগঞ্জ নিজের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি আশুলিয়ায় আসেন জরিনা ও তার বাবা আকবর আলী মণ্ডল। খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিকাল ৫টার দিকে তারা বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। জামাই নূর ইসলাম তাদের টাঙ্গাইলগামী একটি মিনিবাসে তুলে দেন। এই বাসটি স্বপন ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরই বাসের হেলপার ও সুপারভাইজাররা আকবর আলীকে মারধর করে বাস থেকে ফেলে দেয়। এরপর জরিনাকে তারা হত্যা করে। পরে আকবর বিষয়টি নূর ইসলাসকে জানালে সে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরে জরিনার মরদেহ উদ্ধার করে। বাসের ভিতরে জরিনাকে কীভাবে হত্যা করা হয়—জানতে চাইলে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনো আমরা হাতে পাইনি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসরোধ করে জরিনাকে হত্যা করা হয়েছে।