শুক্রবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ধইঞ্চার জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধইঞ্চার জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন

এবার ধইঞ্চার জীবন নকশা উন্মোচন করেছেন বিজ্ঞানীরা। পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণার সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানীরা ধইঞ্চার (Sesbania bispinosa) জীবন নকশা উন্মোচন অর্থাৎ জিনোম ?সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করে এর জিনসমূহ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এর আগে ২০১০ সালে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা পাটের জীবন রহস্য উন্মোচন করেন। তাদের এই কাজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক আগ্রহ এবং পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। ধইঞ্চার জিনোম গবেষণার মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো। বায়ুমণ্ডলে থাকা ৭৬ ভাগ নাইট্রোজেন প্রচলিত ফসল সরাসরি গ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু দেশে প্রাচীনকাল থেকে সবুজ সার হিসেবে ব্যবহূত ধইঞ্চার শিকড় ও কাণ্ডে এক ধরনের নডিউল বা গুটি তৈরি হয় যাতে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন সঞ্চয়পূর্বক গাছকে সরবরাহ করে। ধইঞ্চার এ বৈশিষ্ট্য অন্যান্য ফসলে প্রয়োগের লক্ষ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর নির্দেশনায় ধইঞ্চার জীবন নকশা গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের কৃষি উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য পূরণে এবং রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এ গবেষণা অবদান রাখতে পারবে বলে আশা করা যায়।

প্রায় ১ হাজার ১৬৮ মিলিয়ন বেস পেয়ার জিনোম আকারের দেশি ধইঞ্চার প্রায় ৪৯ হাজারটি জিন শনাক্ত করে অধিকাংশ জিনের কার্যসমূহ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। জিনসমূহ এবং সম্পূর্ণ জিনোম বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান National Center  for Biotechnology Information (NCBI) কর্তৃক Validate করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানটি চূড়ান্ত Accession Number প্রদান করেছে। বর্তমানে ধইঞ্চার আঁশের মানোন্নয়নসহ প্রায়োগিক গবেষণা চলমান রয়েছে এবং ইতোপূর্বে সম্পন্নকৃত জিনোম গবেষণার ফলাফল বিএমসি জিনোমিক্স ও নেচার প্ল্যান্টের মতো বিশ্বখ্যাত জার্নালে প্রকাশের ধারাবাহিকতায় এ গবেষণার ফলাফলও অনুরূপ জার্নালে প্রকাশের পাশাপাশি মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের কার্যক্রম চলছে। উচ্চ প্রযুক্তির কৃষি গবেষণাকে জোরদার করতে পাটবিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণার মাধ্যমে সব ধরনের প্রাণি বা উদ্ভিদের জিনোম নিয়ে গবেষণার সুবিধাসম্পন্ন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্লাটফর্ম গড়ে তোলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিনোম গবেষণায় সাফল্যের এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি নতুন কৃষি বিপ্লবের সূচনা করা সম্ভব হবে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা পাটের জীবন রহস্য উন্মোচনে সাফল্য লাভ করে ২০১০ সালে। বিশ্বখ্যাত জিনোম বিজ্ঞানী প্রফেসর মাকসুদুল আলমের হাত ধরে শুরু হওয়া জিনোম গবেষণাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাটবিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। প্রফেসর মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে এ প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা ২০১২ সালে পাটসহ বিশ্বের ৫০০ টিরও বেশি উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর একটি ছত্রাক এবং ২০১৩ সালে দেশি পাটের জীবন নকশা উন্মোচন করেন। গবেষণালব্ধ তথ্যকে কাজে লাগিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে বিজ্ঞানীরা তোষা ও দেশি পাটের উচ্চ-ফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী চারটি নতুন লাইন উদ্ভাবন করেছেন। এর মধ্যে আগাম বপন উপযোগী, ১০০ দিনে কর্তনযোগ্য, উন্নততর আঁশযুক্ত এবং বর্তমানে সর্বাধিক চাষকৃত জাতের চাইতেও ২০% বেশি ফলনশীল তোষা পাটের একটি লাইন ‘রবি-১’ এ বছরই জাত হিসেবে অবমুক্ত হবে বলে আশা করা যায়। এ জাত প্রচলনের ফলে বিদেশ থেকে বছরে যে প্রায় ছয় হাজার মেট্রিক টন পাট বীজ আমদানি করতে হয় তা ক্রমান্বয়ে বন্ধ হবে। এ ছাড়া পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট মধ্যম মাত্রার (৯ ডিএস/মি) লবণাক্ততা সহিষ্ণু বিজেআরআই দেশি পাট-৮ উদ্ভাবন করেছে যা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পতিত লবণাক্ত জমিতে আবাদযাগ্য।

সর্বশেষ খবর