শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধান চাষ করে জীবিকা কৃষকদের

বদলে গেছে আশুরার বিল

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

বদলে গেছে আশুরার বিল

উত্তরবঙ্গের বৃহৎ বিল আশুরার বিল— এখানে এখন আর মাছ নয়, চলছে ধান চাষ। বিলের প্রায় অর্ধেকের বেশি এলাকাজুড়ে ধান চাষ করছেন কৃষক। এ বিলে  শুকনো মৌসুমে ধান চাষ আর বর্ষাকালে মাছ চাষ হয়। তবে ঐতিহাসিক আশুরার বিলে পানি ধরে রাখতে একটি স্লুইসগেট এবং খননের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তদারকি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থাসহ খনন করলে এই আশুরার বিলে দেশীয় মাছ সংরক্ষণ, উত্তরবঙ্গে দেশীয় মাছের চাহিদা পূরণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে ও কমপক্ষে ১২০ মে. টন মাছ পাওয়া যাবে। অপরদিকে, কৃষকেরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ  মৌসুমে বিঘাপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মণ ধান পাবেন তারা। খননসহ বিলের পূর্ব প্রান্তে পানি ধারণের জন্য একটি স্লুইস গেট বা রাবার ড্যাম স্থাপন করা গেলে শুষ্ক মৌসুমে পানি কমবে না। বর্ষা মৌসুমে এ বিলে লাল, সাদা শাপলা ফুলসহ বিলের সৌন্দর্য দেখে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভ্রমন পিপাসুরা মুগ্ধ হয়।

এ কারণে বন বিভাগ থেকে এটিকে পর্যটকদের দর্শনীয় করতে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে সরকার ঘোষিত জাতীয় উদ্যান শালবনের কোল ঘেঁষে এ বিলের অবস্থান। বিলটি লম্বায় ৫ কিলোমিটার। আশুরার বিল নিয়ে রয়েছে পৌরাণিক বিচিত্র কাহিনী। অতি প্রাচীনকালে দেবতা ও অশুরদের মধ্যে লড়াই চলছিল আধিপত্য বিস্তার নিয়ে। সেখানে দেবতাদের নিকট অশুরেরা পরাজিত হয়েছিল। দেবতাদের খঞ্জরের আঘাতে অশুরদের ঝরা রক্ত তাদেরই পায়ে দেবে যাওয়া গর্তে ভরে গিয়েছিল বলে অশুরের বা আশুরার বিল নামকরণ করা হয়। অনেকে বলেন, ওই বিলের চারপাশ থেকে ৮০টি দ্বার বা নালা চতুর্দিকে ছড়িয়ে গেছে বলে আশি নালা নামের উৎপত্তি হয়েছে।

বিশাল ওই বিলের গভীরতা ও কাদার তলানী এবং চারপাশ বেষ্টিত শালবন এক সময় নানা কিংবদন্তির জন্ম দেয়। বিলের মাঝে কতিপয় স্থানের নাম আছে যেগুলোকে কেন্দ  করে আরো কিছু চমৎকার কাহিনীও রয়েছে। যেমন- পাতিলদহ, বুড়িদহ, কাজলাদহ, পীরদহ, মুনির আইল ও মুনির থান ইত্যাদি। পৌরাণিক কাহিনী যাই থাক আশুরার বিলে মৎস্য সম্পদের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। টেংরা, কই, মাগুর, পুঁটি, চিংড়ি, আইড়, শোল, গজার, বাইমসহ নানা প্রজাতির মাছ এখনো পাওয়া যায় বলে স্থানীয়রা জানান। নবাবগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামিম আহমদ জানান, শুষ্ক  মৌসুমে পানি না থাকার কারণে ধান চাষ করে কৃষক। আশুরার বিলের নবাবগঞ্জ ও বিরামপুরের এলাকা নিয়ে আয়তন ৩১৯ হেক্টর। এর মধ্যে নবাবগঞ্জে ২৫১ হেক্টর অবস্থিত। এ বিলটিতে হারিয়ে যাওয়া অনেক প্রজাতির মাছ এখনও ধরা পড়ে। আশুড়ার বিলের বুড়িদহ নামক স্থানে ২০০৬ সালে ০.৫ হেক্টর জমিতে একটি অভয়াশ্রম ও কাজলাদহ নামক স্থানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ০.৫ হেক্টর জমিতে আরেকটি অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে। এ জায়গাতে কিছু পানি রয়েছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর