সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোটার নম্বরের খোঁজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটার নম্বর না থাকায় ঢাকা-৮ ও ঢাকা-৯ আসনের বেশ কটি কেন্দ্রে ভোট দিতে পারেননি অনেকে। অন্যদিকে ওই দুটি আসনের বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ধানের শীষের এজেন্ট ছিল না। খোদ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারও রাজধানীর মগবাজারে ইস্পাহানী স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোট দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এমন মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে অনেক ভোটার ভোট না দিতে পারার কারণে বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস ভোট দেননি বলে অভিযোগ করেছেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বলছেন, ভোটে জিততে পারবেন না বলেই বিএনপির প্রার্থীরা তাদের এজেন্ট দেননি। ভোটার নম্বর নেই, ভোট নেই : ভোটার নম্বর না থাকার কারণে আইডি কার্ড থাকার পরও রাজধানীর শাহজাহানপুরে মির্জা আব্বাস ডিগ্রি কলেজে এবং মতিঝিলের পোস্ট অফিস স্কুলে অনেকে ভোট দিতে পারেননি। এমন ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, আগে থেকে ভোটার নম্বর সংগ্রহ না করার কারণে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। পোস্ট অফিস স্কুলের সামনে বেলা ১২টার দিকে কথা হচ্ছিল লুৎফুন্নাহার নামের এক মধ্যবয়সী মহিলার সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ভোটার নম্বর না থাকায় তিনি প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা করেও ভোট দিতে পারেননি। কোনো এজেন্টই তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেননি। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শাহজাহানপুর মির্জা আব্বাস কলেজের সামনে নিজের ভোটার কার্ড নিয়ে চিৎকার করছিলেন রোকেয়া কবির লাভলি নামের এক মধ্যবয়সী নারী। কাছে যেতেই চিৎকার করে বলা শুরু করলেন, ‘আমি অসুস্থ মানুষ। ভোট দিতে আসছি। কিন্তু ভোট দিতে পারি নাই। দুই ঘণ্টা ধরে এখানে-সেখানে ঘুরতেছি। একজন বলে, ভেতরে যান; ভেতরে গেলে আরেকজন বলে, বাইরে থেকে স্লিপ আনেন। বাইরে এলে দেখি স্লিপ নেই। আমি এখন কার কাছে যাব। তাহলে কি ভোট দিতে পারব  না? এর বিচার কে করবে?’ কথা বলার একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন রোকেয়া। কাঁদতে কাঁদতে তিনি চলে যান।

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এ সংখ্যা বাড়তে থাকে। ছোট জটলা থেকে বড় হতে থাকে ভোট দিতে না পারা মানুষের সংখ্যা।

গণমাধ্যমেরকর্মীদের দেখে অনেকের মতো এগিয়ে আসেন নারগিস আক্তার নামের আরেক নারী। তিনিও একই অভিযোগ করে বলেন, ‘ভোট দিবার পারি নাই।’ একপর্যায়ে শতাধিক নারী ও পুরুষ কলেজের মাঠে ভোটার কার্ড উঁচিয়ে ভোট দেওয়ার জন্য চিৎকার করতে থাকেন।

কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সকালে ভোট শুরুর সময় কেন্দ্রের সামনে কিছু লোক টেবিল-চেয়ার নিয়ে বসেছিলেন। তারা ভোটারদের ভোটার নম্বরের স্লিপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর তাদের সেখান থেকে তুলে দেওয়া হয়। এতেই বিপাকে পড়েন সাধারণ ভোটাররা।

একপর্যায়ে এই কেন্দ্রে আসেন এ আসনে বিএনপি প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। তারা দুজনই এই কেন্দ্রের ভোটার। তাদের সামনে পেয়ে অনেকে ভোট না দিতে পারা ব্যক্তিরা অভিযোগ করছিলেন। এই দম্পতি প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা ভোট দিতে পারছেন না। এই প্রতিবাদে আমরা ভোট দেব না। আমরা এভাবেই চলে যাচ্ছি।’

এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার তুহিনুল ইসলাম বলেন, ‘এই কেন্দ্রের ভোটার ২ হাজার ২৭০ জন। যারা ভোটারদের স্লিপ দিচ্ছিলেন তারা না থাকায় কিছুটা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এর পরও আমরা ভোটারদের ভোটার নম্বর খুঁজে দিচ্ছি। কেউ ভোট না দিয়ে ফিরে যাচ্ছেন এ অভিযোগ ঠিক নয়।’ তিনি যখন এসব কথা বলছিলেন তার সামনেই ভোট দিতে না পারা ভোটাররা বিক্ষোভ করছিলেন।

বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ছিল না ধানের শীষের এজেন্ট : গতকাল সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ঢাকা-৮ ও ৯ নির্বাচনী আসনের অন্তত ২০টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ধানের শীষের এজেন্ট নেই। তবে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল শাহ্্জাহানপুর মির্জা আব্বাস মহিলা কলেজ কেন্দ্র। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ধানের শীষের এজেন্ট কেন নেই এ প্রশ্নের উত্তরা আমি দিতে পারব না। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে কোনো এজেন্ট আসেননি বা কোনো এজেন্ট কেন্দ্র ছেড়ে চলে যাননি।’

বিদেশিদের পর্যবেক্ষকের চোখে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ : সকাল সোয়া ১০টার দিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী যখন অবস্থান করছিলেন ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে আসে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের আট সদস্যের প্রতিনিধি দল। দলের কানাডীয় পর্যবেক্ষক তানিয়া ডাউন ফস্টার বলেন, তিনি এই প্রথম বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এসেছেন। এখন পর্যন্ত পাঁচটি কেন্দ্র ঘুরেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হতে দেখেছেন। মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন, নিজেদের ক্ষমতায়িত মনে করছেন। ভারত থেকে আসা কমল ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত পাঁচটি ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি। সার্বিক পরিস্থিতি দেখে খুবই ভালো লেগেছে। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। বেশি ভালো লেগেছে মহিলাদের অবাধে ভোটকেন্দ্রে আসার দৃশ্য দেখে।’ নেপালের মো. আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয় দেখে ভালো লেগেছে। কোনো ঘাটতি নেই। সহিংসতার কোনো ঘটনা চোখে পড়েনি।’ শ্রীলঙ্কার মো. এহসান বাদল বলেন, ‘আমি চারটি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি। শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশে ভোট হচ্ছে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর