চকবাজারের অগ্নিকান্ডে নিহতদের মধ্যে ৩৭টি মরদেহ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩২টি মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বাকি লাশের পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে স্বজনদের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। পরে তাদের লাশ হস্তান্তর করা হবে। গতকাল স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে চকবাজারের বাতাস। কেউ চিৎকার করে কাঁদছিলেন, করছিলেন আহাজারি। আবার কারও মুখে রা ছিল না। ধ্বংসস্তূপের মাঝে হারানো স্বজনের শেষ চিহ্নটুকু খুঁজছিলেন তারা। কারণ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অনেক মানুষের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফলে নিখোঁজদের সন্ধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ভিড় করেন অনেকে। তবে ঢাকা মেডিকেলে স্থাপিত জেলা প্রশাসনের তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রাথমিকভাবে নিখোঁজ ১১ জনের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতায় থাকা রেড ক্রিসেন্টের ফিল্ড অফিসার শাকিলা আক্তার জানান, তাদের হিসাবে এখনো ৬২ জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ঢাকা মেডিকেলে স্থাপিত ঢাকা জেলা প্রশাসনের তথ্যকেন্দ্র থেকে লাশ হস্তান্তরের সার্বিক দায়িত্বে থাকা ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সেলিম রেজা বলেন, বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত আমরা ৩৭টি মরদেহ শনাক্ত এবং এর মধ্যে থেকে ২২টি হস্তান্তর করেছি। চকবাজার থানার এসআই প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, সুষ্ঠুভাবে লাশ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের সহায়তায় কাজটি করছে ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ। তথ্যকেন্দ্র থেকে জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ইমরুল হাসান বলেন, মরদেহ সমাহিত করার জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। গত রাত পৌনে ১০টার দিকে আহতদের দেখতে এসে সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক বলেন, শিল্প আর আবাসন একসঙ্গে হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে স্থানীয়দেরও সচেতন হওয়া জরুরি। আহতদের সব খরচ সরকার বহন করবে। নিহতদের পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। আর দাফন-কাফনের জন্য ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া হচ্ছে। বার্ন ইউনিটে ভর্তি ৯ রোগীরই শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ ৬৭টি লাশ পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, যেসব লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হবে না, সেগুলোর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরে স্বজনদের সঙ্গে মিলিয়ে হস্তান্তর করা হবে। তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ দগ্ধ একজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এর বাইরে আরও নয়জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। মরদেহগুলো শনাক্ত হবে তিনভাবে : চকবাজারে আগুনে পুড়ে যাওয়া মরদেহগুলোকে তিনভাবে শনাক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) প্রেসিডেন্ট ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। গতকাল ঢামেকে মরদেহ দেখে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘এখানে পরিস্থিতি দেখলাম, চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। এখানে ৬৭টি মরদেহ আছে। এগুলো তিনভাবে শনাক্ত করা হবে। যাদের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে তাদের পোস্টমর্টেম করা হবে। যাদের বোঝা যাচ্ছে না তাদের ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা হবে। আর যাদের ফিঙ্গার টেস্টের মাধ্যমেও শনাক্ত করা সম্ভব হবে না তাদের ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা হবে। তবে ডিএনএ টেস্ট করাতে সময় লাগবে।