সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

চেতনায় ঐক্য পুঁজিবাদের তাড়নায় বিভক্ত

-খালেকুজ্জামান

চেতনায় ঐক্য পুঁজিবাদের তাড়নায় বিভক্ত

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেছেন, “আমরা সমাজতন্ত্রের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, আজ পুঁজিবাদের তাড়নায় বিভক্তহয়েছি। আমরা ‘জনতার ক্ষমতা’ এই ভিতের ওপর গণশাসন চেয়েছিলাম। পরিবারতন্ত্র, আমলাতন্ত্র, লুটপাটতন্ত্র এখন শাসনের দোর্দ- প্রতাপে জনগণকে শাসাচ্ছে।” তার মতে, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বিদ্যমান বাস্তবতার সঠিক অনুধাবনে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে চলতে পারলে বামপন্থিদের শুধু টিকে থাকা নয়, জাতিকে টিকিয়ে রেখে প্রগতির পথে অনেক দূর যাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে শনিবার এসব কথা বলেন বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জমান। তিনি বলেন, ‘ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েও ভ্রান্ত পথের নষ্ট রাজনীতি রক্ষার স্বার্থে মৌলবাদী ধ্যানধারণা ও সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে অশুভ আঁতাতে মিলিত হয়েছি। আমাদের মাটির নিচে ও ওপরে যে সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে, পেশিতে ও মগজে যে সৃজনীশক্তি রয়েছে, জনগণের মিলিত উদ্যোগে তা আহরণ আর সুষম বণ্টনে তার ভোগ-ব্যবহারে আমরা মাথা উঁচু করে মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনায় প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে মুষ্টিমেয়র উন্নতি নয়, গোটা জাতির, জনগণের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পারি। তবে এ জন্য বামপন্থার দিকে মুখ ফেরাতে হবে, বামপন্থার শক্তিসহ সব দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিবাদী শক্তিকে মিলিত হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আলো-আঁধারি থেকে আমরা ঘোর অন্ধকারে তলাতে থাকব।’ খালেকুজ্জমান বলেন, ‘বামপন্থা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা থাকতে পারে, তর্ক থাকতে পারে এবং সেটাই স্বাভাবিক। আমরা চাই তা নিয়ে সুষ্ঠু মতবাদিক বিতর্ক, যুক্তিসংগত তর্ক-বিতর্ক হোক। যত বেশি তর্ক-বিতর্ক হবে ততই বামপন্থা ভিতর থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠবে। কিন্তু কোনো একটা ব্যর্থ পরিণতি কিংবা কোনো শক্তির আদর্শচ্যুতিকে হাজির করে বিজ্ঞানকে, আদর্শবাদকে অবজ্ঞা বা আঘাত করতে গেলে সমাজদেহ ও সমাজমানস থেকে বহু কষ্টে অর্জিত নীতি-নৈতিকতা মূল্যবোধগুলোও খসে পড়তে থাকে। বামপন্থা আর যা-ই হোক প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, সুন্দর স্বপ্নগুলোকে বাঁচিয়ে রাখে, আর পুঁজিতন্ত্র প্রবৃত্তিকে লাগামছাড়া করে, সুকুমার বৃত্তিগুলোকে ধ্বংস করে। তাই আজ নিছক গ্রহণ-বর্জন নয়, বিজ্ঞানের ও যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাইয়ের সময় এসেছে। কারণ মানুষকে বাঁচতে হবে, মানুষকে বাঁচাতে হবে। সঠিক বামপন্থা তাকেই নির্দেশ করে।’ বাসদ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বিদ্যমান বাস্তবতার সঠিক অনুধাবনে ভবিষ্যৎ কর্মদিশা তৈরি করে বামপন্থিরা ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে চলতে পারলে বামপন্থিদের শুধু টিকে থাকা নয়, জাতিকে টিকিয়ে রেখে প্রগতির পথে অনেক দূর যাওয়া সম্ভব।

কারণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আড়াইশ বছরের অবিরাম সংগ্রামের ইতিহাস। ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল ভাঙার, সামরিক-অসামরিক স্বৈরাচারের দেয়াল উপড়ে ফেলার, সাম্প্রদায়িকতার বিষদাঁত ভেঙে দেওয়ার, স্বাধীনতা ও মুক্তির বেদিমূলে জীবন উৎসর্গ করার বিরল ইতিহাস যেমন আমাদের আছে, তেমনি জ্ঞান-বিজ্ঞানে মেধা-প্রজ্ঞা প্রদর্শনের দৃষ্টান্তও আমাদের পূর্বপূরুষেরা রেখে গেছেন।’ তিনি বলেন, ‘সমাজ বিকাশের নিয়মে পুঁজিবাদের পরবর্তী ধাপ যদি সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ হয়, আর তাকে যদি বামপন্থা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তাহলে তা ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি হিসেবে ভাঙা-গড়া, চড়াই-উতরাই, উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে আবির্ভূত হতে থাকবে, এগিয়ে যাবে। সময় ও স্থান-কাল দিয়ে তাকে আটকানো যাবে না। আজ ৬০০ বছরের পুঁজিবাদ তার শেষ ধাপে। অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী বিশ্ব পরিসরে যে নির্মম অশান্তি, শোষণ-বঞ্ছনা-বৈষম্য মানুষের মানবিক ও সাংস্কৃতিক মৌলিক অধিকারগুলো কেড়ে নিচ্ছে, অন্ধকারের শক্তিগুলোকে জাগিয়ে তুলছে, তাতে বামপন্থা ছাড়া উত্তরণের বিজ্ঞানসম্মত পথ ও পন্থা আছে বলে আমাদের জানা নেই।’ খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সংগত কারণেই স্বাধীনতার ঘোষণা ও অঙ্গীকারে সাম্য সমাজতন্ত্র তথা বামপন্থার পথই নির্দেশ করেছিল। কিন্তু গত ৪৮ বছর যারা দেশ শাসন করেছে, তারা সেই পথনির্দেশ ও অঙ্গীকার থেকে কথিত বাস্তবতার দোহাই দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে দেশ শাসন করেছে এবং মানবতা-মনুষ্যত্বের সমাধির ওপর উন্নয়নের ইট-পাথরের বড় কীর্তি স্থাপন করে চলেছে। বামপন্থিরা এই বিচ্যুতি রুখতে কিংবা শহীদি আত্মদানকারী ও স্বাধীনতাকামী জনগণের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের পথে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারেনি। সে কারণ উদ্ঘাটন আজ জরুরি।’

সর্বশেষ খবর