শিরোনাম
রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য বিপন্ন

মাসুম হেলাল, সুনামগঞ্জ

টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য বিপন্ন

সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিশ্ব ঐতিহ্য বা রামসার সাইট হিসেবে জায়গা পাওয়া স্থান টাঙ্গুয়ার হাওর। তবে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমির জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। ‘ছয় কুড়ি বিল আর নয় কুড়ি কান্দা’ নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থান সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলায়। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই জলাধারটি মানুষের আকর্ষণ কেড়েছে তার অনন্য জীববৈচিত্র্যের কারণে। সুউচ্চ মেঘালয় পাহাড়ঘেঁষা দৃষ্টিনন্দন এই জলাভূমিতে রয়েছে  ২৫০ প্রজাতির পাখি, ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২ প্রজাতির ব্যাঙ, ১৫০ প্রজাতির সরীসৃপ এবং হাজারেরও বেশি প্রজাতির অমেরুদ-ী প্রাণী। শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে ৫১ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে এই হাওরে। ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ চিহ্নিত করা হয়। ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি এই হাওরকে ‘রামসার সাইট’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিশেষ ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসা হয় হাওরকে। যদিও হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নেওয়া সেই সময়ের পদক্ষেপগুলো হাওরকে সংকট থেকে উত্তরণের পরিবর্তে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে টাঙ্গুয়ার হাওরের তীরবর্তী মানুষের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে হাওরকে ঘিরে পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। নৌকায় করে হাওর দর্শন এই উদ্যোগ্যের অন্যতম। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন একটি এলাকায় পর্যটন বিকাশে ইকো ট্যুরিজন বা পরিবেশবান্ধব পর্যটনশিল্প বিকাশের কথা। কিন্তু হাওরের সংকটাপন্ন জীববৈচিত্র্যের প্রতি তোয়াক্কা না করেই পর্যটনের বিকাশ হচ্ছে এখানে। হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন আসছেন পর্যটক। হাওরের বৈচিত্র্যের দিকে খেয়াল না করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় হাওরজুড়ে ঘুরে বেড়ান হাজারো পর্যটক। শত শত নৌকা নিয়ে তারা হাওরে রাতযাপন করেন। নৌকাগুলোতে বড় বড় সাউন্ড সিস্টেম তুলে উচ্চশব্দে গানবাজনা, হৈহুল্লোড় করা হয়। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে হাওরের প্রকৃতির ওপর। এখানেই থেমে নেই- হাওরের জীববৈচিত্র্যের তোয়াক্কা না করে ফি-বছর আয়োজন করা হয় জোছনা উৎসব। উদ্যোগ নেওয়া হয় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার। এ ছাড়া হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটকরা পলিথিনসহ নানা ধরনের ময়লা আবর্জনা অবাধে ফেলেন হাওরের পানিতে। এতে দিন দিন দূষিত হচ্ছে হাওরের পানির স্বচ্ছতা। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে হাওরের মাছ, গাছ, পাখিসহ প্রাণীবৈচিত্র্যের ওপর।

সর্বশেষ খবর