মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

নির্ধারিত সময়ে পদ্মায় রেল চলা অনিশ্চিত

মূল সেতুর কাজের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না রেলওয়ে

নিজামুল হক বিপুল

নির্ধারিত সময়ে পদ্মায় রেল চলা অনিশ্চিত

প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। গতকালও একটি স্প্যান বসেছে সেতুর জাজিরা অংশে। সেই তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের কাজ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আগামী বছরের জুনে (এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য নির্ধারিত সময়) পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনেই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালানো শুরুর বিষয়ে এখনো আশাবাদী। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে গতিতে রেলসংযোগ স্থাপনের কাজ চলছে তাতে নির্ধারিত গাড়ি চলাচলের জন্য সময়ে সেতু খুলে দেওয়ার অনেক পরে ট্রেন চলাচল শুরুর সম্ভাবনাই বেশি।

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রেলপথে সংযুক্ত করতে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গাকে সংযুক্ত করে রেললাইন নির্মাণে প্রকল্প নেয় সরকার। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ হবে। মূল লাইন ছাড়া লুপ, সাইডিং ও ডাবল লাইন হবে আরও ৪৬ দশমিক ২২ কিলোমিটার। মোট রেলপথ হবে ২১৫ কিলোমিটার। এতে ভায়াডাক্ট বা উড়াল সড়ক থাকবে ২৩ দশমিক ৩৭৭ কিলোমিটার। প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। (মূল প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা।) আর প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জি টু জি ভিত্তিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু প্রকল্পের অর্থের সংস্থান করতে বেশ সময়ক্ষেপণ হয়। প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়ার দুই বছরেরও বেশি সময় পর ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল চীনা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে রেলওয়ের ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার ঋণ চুক্তি হয়। যার ফলে প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করতে যথেষ্ট সময় নষ্ট হয়। 

প্রকল্পের প্রথম অংশে রেলপথ হবে ঢাকার পোস্তগোলা থেকে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ শরীয়তপুর, মাদারীপুর হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত। দ্বিতীয় অংশে নির্মাণ হবে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত। রেলপথ মন্ত্রণালয় চাচ্ছে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ আগামী বছরের জুনে শেষ করতে। যাতে সেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করতে পারে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যে গতিতে কাজ এগোচ্ছে তাতে মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত অর্থাৎ পদ্মা সেতুর উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ের মধ্যে ট্রেন চালানো শুরু করাটা সম্ভব হলেও হতে পারে।

সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসকরা অধিগ্রহণকৃত জমি বুঝিয়ে দিলেও রেলওয়ের নকশা অনুযায়ী অ্যালাইনমেন্ট ফিক্স হওয়ার পর এখন দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু জায়গায় নকশা পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে নতুন করে কিছু কিছু স্থানে জমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে। এতে করে কাজের গতি কিছুটা কমে গেছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রকল্পের প্রথম ধাপে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ২৮ কিলোমিটার রেলপথ (পদ্মা সেতুসহ) নির্মাণের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে দুই কিলোমিটার করে মোট চার কিলোমিটার ভায়াডাক্ট বা উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হবে। যার ওপর দিয়ে রেললাইন স্থাপন হবে। এই দুই ভায়াডাক্ট নির্মাণে এখন পর্যন্ত (২২ জানুয়ারি পর্যন্ত) অগ্রগতি বলতে, পদ্মা সেতুর উত্তর পাড়ে মাওয়া অংশে মোট পিয়ার বসবে ৬৭টি। এ জন্য পাইলিং হবে ৪১১টি। এখন পর্যন্ত পাইলিং হয়েছে ৭৭টি। আর পিয়ার নির্মাণের কাজ চলছে দুটির। এই অংশে মোট বক্স গার্ডার সেগমেন্ট হবে ৮১২টি। এর মধ্যে নির্মাণ হয়েছে ২১৭টি। 

একইভাবে জাজিরা প্রান্তে দুই কিলোমিটার ভায়াডাক্টের জন্য নির্মাণ করা হবে ১০৬টি পিয়ার। যার জন্য পাইলিং করতে হবে ৬৪৭টি। এখন পর্যন্ত পাইলিং সম্পন্ন হয়েছে ৫৩টির। আর পিয়ার নির্মাণ হয়েছে একটি। চলমান আছে দুটি। এই অংশের জন্য বক্স গার্ডার সেগমেন্ট প্রয়োজন হবে এক হাজার ২৭২টি। এখন পর্যন্ত নির্মাণ হয়েছে ২৯৬টি।

এ ছাড়া জাজিরা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের জন্য মাটির বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু সেখানেও নকশার কিছুটা পরিবর্তন হওয়ায় নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে কিছু কিছু অংশে। এতে করে কাজের গতি শ্লথ হয়ে গেছে। এর ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথে ট্রেন চলা এখনো অনিশ্চিত।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের ওই অংশের কাজ শেষ করতে।

সর্বশেষ খবর