মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ভিড় কম, বিক্রি ভালো

মূলমঞ্চে আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর নয়াচীন

মোস্তফা মতিহার

ভিড় কম, বিক্রি ভালো

বইমেলায় গতকাল দর্শনার্থীদের পদচারণা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মুখরিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিস্তীর্ণ প্রান্তর ও বাংলা একাডেমি চত্বর। ছিমছাম পরিবেশে সাড়ে ৮ লাখ বর্গফুটের বিশাল পরিসরের মেলাজুড়ে এ এক অন্যরকম ভালোলাগা। সাজানো বইয়ের সঙ্গে নতুন বইয়ের গন্ধে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। অমর একুশে গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিনে গতকাল বিক্রি নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন প্রকাশকরা। ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, ‘মাত্র শুরু হলো, জমতে একটু সময় তো লাগবেই। পাঠকের আনাগোনা কম থাকলেও বিক্রি নিয়ে আমি আশাবাদী। লোক কম থাকার পরও বিক্রির অবস্থা ভালো যাবে বলে আশা প্রকাশ করছি।’ এদিকে আশার কথা শোনালেন অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা ও অন্বেষার ফাতিমা বুলবুলও। তাদের নিজ নিজ প্যাভিলিয়নে তুলনামূলক ভালো বিক্রি হচ্ছে বলেও জানালেন তারা।

এদিকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গীকৃত এবারের মেলার মূল মঞ্চের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং স্টল ও প্যাভিলিয়নের ডিজাইনেও মূর্ত হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ বাণিজ্য মেলা শেষ হওয়ার পর কাল মেলায় পাঠকের উপস্থিতি আরও বাড়বে, তবে আশানুরূপ বইপ্রেমীদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে শুক্রবার পর্যন্ত। গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৩৭টি।

শাবান মাহমুদের ‘বঙ্গবন্ধুর সারা জীবন’ ও ‘বাঙালির আত্মপরিচয়’

প্রকাশনা সংস্থা লাবণী এনেছে সাংবাদিক শাবান মাহমুদের দুটি বই ‘বঙ্গবন্ধুর সারা জীবন’ ও ‘বাঙালির আত্মপরিচয়’। বই দুটি মেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বলে জানালেন প্রকাশক ইকবাল হোসেন সানু। এর মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধুর সারা জীবন’ বইটিতে লেখক বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলা, ছাত্রজীবন, রাজনৈতিক জীবন, ভাষা আন্দোলন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গণপরিষদ নির্বাচনসহ নানা বিষয় তুলে ধরেছেন। ইকবাল হোসেন সানুর প্রচ্ছদে ২৫৬ পৃষ্ঠার সচিত্র এ বইটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা। বইটি পাঠকদের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রকাশক।

 

দু-এক দিনের মধ্যে লেখকের ‘বাঙালির আত্মপরিচয়’ বইটি মেলায় আসবে বলে জানালেন প্রকাশক।

মূল মঞ্চ : বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’ শীর্ষক নতুন বইয়ের আলোচনা।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফোকলোরবিদ শামসুজ্জামান খান।

আলোচনায় অংশ নেন ড. ফকরুল আলম ও কবি তারিক সুজাত। সভাপতিত্ব করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আগের দুটো বইয়ের ধারাবাহিকতায় “আমার দেখা নয়াচীন” বইটিও অসাধারণ লেখক-নৈপুণ্যের পরিচয়বহ। কারাগারে বসে লেখা এ বইয়ে আছে দেশ এবং বিশ্বমানুষের মুক্তির কথা। তিনি একজন দক্ষ পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে সমাজতান্ত্রিক নতুন চীন পরিদর্শন করেছেন এবং শিল্পীর তুলির ন্যায় অপরিসীম মমতায় সে কথা লিপিবদ্ধ করেছেন। আর্থ-সামাজিক অবস্থার পাশাপাশি চীন দেশের সাংস্কৃতিক নতুনত্ব তাঁর নজর এড়িয়ে যায়নি।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বিনয় করে বলেছেন তিনি লেখক নন, কেবল তাঁর দেখা চীনের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন মাত্র। কিন্তু বইটি নিবিড় পাঠে আমরা দেখব একজন প্রকৃত জাতীয়তাবাদী এবং আন্তর্জাতিকতাবাদী নেতা ও লেখক যেন গভীর অনুসন্ধানে এবং বিশ্লেষণে নয়াচীনকে পাঠকের সামনে তুলে ধরছেন। অপার সৌন্দর্যপ্রিয়তা, জীবন-সমাজ-সংস্কৃতির প্রতি মুগ্ধদৃষ্টি ও সঞ্জীবন-তৃষ্ণা এ গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য।’

স্বাগত বক্তব্যে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু রয়েছেন আমাদের চেতনার অংশ জুড়ে। তাঁর নতুন বই “আমার দেখা নয়াচীন”-এর পাতায় পাতায় আন্তর্জাতিকতাবাদী এক মহান ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি যেমন টের পাওয়া যায় তেমন বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর সংকল্প পরিস্ফুট হয়।’

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের এক অনুপম আলেখ্য ধরা রইল “আমার দেখা নয়াচীন” বইয়ে। তরুণ শেখ মুজিব চীন দেশ ভ্রমণে তাঁর যে অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন তুলে ধরেছেন যেন তারই আলোকে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন করেছেন এবং শোষণমুক্ত স্বাধীন স্বদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছেন।’

আলোচনার পর কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি মোহাম্মদ সাদিক, খালেদ হোসাইন ও নাসির আহমেদ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম, আসাদুজ্জামান নূর ও লায়লা আফরোজ। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মহিউজ্জামান চৌধুরী, তিমির নন্দী, শ্যামা সরকার ও কে এম আবদুল্লাহ আল মূর্তজা মুহিন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর