মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

লোভনীয় অফারের ফাঁদ

মির্জা মেহেদী তমাল

লোভনীয় অফারের ফাঁদ

২০১০ সালের জুলাই মাসে প্রাইম মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সনদ নেন রিয়াজুল ইসলাম রাজু। পরে যশোর, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর ও কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অফিস নেন। বিভিন্ন লোকজনকে নিয়োগ দেন সেই অফিসগুলোতে। এরপর লোভনীয় অফারের ঘোষণা দেন রাজু। শত শত গ্রাহক হুমড়ি খেয়ে পড়েন সেই অফিসগুলোতে। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন রাজু ও তার সহযোগীরা। লোভের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হন অনেকে। রাজু গ্রেফতারের পর পুলিশ জানতে পারে তার প্রতারণার নানা ঘটনা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এই রাজুকে গ্রেফতার করে।

সিআইডি বলছে, ভুক্তভোগী এক গ্রাহকের অভিযোগ তদন্ত করে দুদক বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করে। সিআইডি মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয়। তদন্তে উঠে আসে রাজুর প্রতারণার বিশাল ফিরিস্তি। ৯ জানুয়ারি যশোরের কোতোয়ালি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রতারণার মাধ্যমে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে রাজুর বিরুদ্ধে। তিনি ১৮ মামলার  পলাতক আসামি। তার প্রতারণার জাল দেখে বিস্মিত হয়েছে সিআইডি কর্মকর্তারা। সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় অসাধু ব্যক্তিদের সহযোগিতায় শাখা অফিস খুলে গ্রাহককে লোভনীয় প্রস্তাব দিত রাজু ও সহযোগীরা। বছরে ৩০ শতাংশ লাভে সঞ্চয়পত্র খোলা, চার বছরে স্থায়ী আমানতের টাকা দ্বিগুণ দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে আড়াই হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। রাজুর সম্পত্তি অনুসন্ধান চালিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতের টাকায় গড়া ৫ কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান পায় সিআইডি।

প্রতারক রাজুর ২টি বাড়ি, ২টি কাভার্ডভ্যানসহ ১০ বিঘা জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া প্রাইম মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামে ২টি গাড়ি ও ৬টি স্থানে জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। মাত্র চার বছরে প্রতারণার জাল ছড়িয়ে রাজু ও তার সহযোগীরা এসব সম্পদ গড়েছে। কুষ্টিয়ার রেহানা এবং আমিরুল নামে দুই ব্যক্তির দায়ের করা মামলায় দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ৩ মাস জেল খাটেন রাজু। এরপর দীর্ঘদিন ধরে তিনি পলাতক ছিলেন।

সিআইডির তদন্তে আরও উঠে আসে, রাজু এবং শম্পা রূপালী ইন্স্যুরেন্সে ২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চাকরি করেন। এরপর তারা পরস্পরের যোগসাজোশে প্রতারণার কাজে যুক্ত হোন। চক্রের অন্যতম সদস্য শম্পা রাণী সাহা ২০১৫ সালে গ্রেফতার হয়ে কিছুদিন জেল খেটে জামিনে মুক্ত হন। এই চক্রের ২০টি শাখার সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রতারক চক্রের অন্য সহযোগীরা বর্তমানে বিভিন্ন জেলাতে স্থানীয় নিবন্ধন নিয়ে প্রতারণার এসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সারা দেশেই এ ধরনের চক্র সক্রিয় রয়েছে। পুলিশও গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। কিন্তু বেরিয়ে এসেই তারা আবার পুরনো পেশায় জড়িয়ে পড়ে। তবে মানুষকে সচেতন হতে হবে। এ ধরনের ফাঁদে নিজেকে জড়ালেই সর্বস্ব খোয়াতেই হবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর