মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনার ওষুধ আবিষ্কারে দেশে দেশে গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী মহাবিপর্যয় নেমেছে। চীনকে মৃত্যুপুরী বানিয়ে করোনা এবার ইউরোপজুড়ে তা দেশে দেশে এখন এর ওষুধ আবিষ্কার ও উদ্ভাবনে চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

করোনাভাইরাস ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে কমপক্ষে ২০ রকম ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি জানিয়েছে, ভ্যাকসিন তৈরির এসব প্রকল্পের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুতই আবিষ্কার হবে কভিড-১৯ প্রতিরোধের ভ্যাকসিন। এরই মধ্যে কিছু ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে। কভিড-১৯ এর জিন সিকোয়েন্স তৈরির মাত্র ৬০ দিনের মাথায় এসব ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়। এর আগে এত দ্রুত সময়ে কোনো ভ্যাকসিন তৈরি ও পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগের নজির নেই। তবে নিরাপদ ভ্যাকসিন তৈরি করতে ১৮ মাস পর্যন্ত লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক মাইক রায়ান বলেন, এত দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরির কাজ এগিয়ে নেওয়া কখনই সম্ভব হত না, যদি না চীন ও অন্যান্য দেশ কোভিড-১৯ এর জেনেটিক সিকোয়েন্স অন্যান্য দেশকে না জানাত। এদিকে চীন, আমেরিকা ও জাপানের চিকিৎসকরা করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরিতে অনেকদূর এগিয়েছেন। সেইসঙ্গে করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন দাবি করেন, দেশটির চিকিৎসকরা করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষেধক হিসেবে ছয়টি ওষুধ আবিষ্কার করেছে রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা। এখন এসব ওষুধ পরীক্ষা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের গবেষকরা এগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে আবিষ্কার করেছে। এক্ষেত্রে আধুনিক বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে এ ভ্যাকসিন করোনাভাইরাস নিরাময়ে কাজ করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন রুশ প্রধানমন্ত্রী।

আবার করোনা মোকাবিলায় মোক্ষম দাওয়াই হতে পারে দুটি পরিচিত ওষুধের কম্বিনেশন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এমনই ঘোষণা দিয়েছেন। আর ওষুধ দুটি হলো হাইডোক্সাইক্লোরোকুইন এবং অ্যাজিথ্রোমাইসিন।

আশার কথা হলো, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর যারা বেঁচে ফিরেছেন এমন রোগীর রক্ত থেকে অ্যান্টিবডি নিয়ে ওষুধ তৈরির চেষ্টা চলছে। এমন ওষুধ দিয়ে আক্রান্ত রোগীদের কয়েক সপ্তাহ চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে ফিরলে সেই ব্যক্তির অ্যান্টিবডি আক্রান্ত রোগীর শরীরে ঢোকালে ঐ শরীরে ‘প্যাসিভ ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে পারে। এমন আশায় বর্তমানে চীন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অ্যান্টিবডি দিয়ে ওষুধ তৈরির গবেষণা চলছে। করেনাভাইরাসের চিকিৎসার ওষুধ আবিষ্কারের দাবি করছে থাইল্যান্ডও। সে দেশের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বেশ কিছু ভাইরাসনিরোধী ওষুধের সংমিশ্রণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের অ্যান্টিভাইরাল তৈরি করেছেন। নতুন এই ওষুধগুলো ব্যবহার করে এরই মধ্যে আক্রান্ত এক রোগীকে সুস্থ করা হয় বলে তারা দাবি করেন। করোনা ভাইরাস সম্পূর্ণরূপে নির্মূলে সক্ষম ওষুধ আবিষ্কারের দাবি করেছে অস্ট্রেলিয়ার এক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ। ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের অধ্যাপক ডেভিড প্যাটারসন জানান, তিনি ও তার গবেষণা দলের সদস্যরা বিশ্বাস করেন তারা করোনা প্রতিকারে সক্ষম দুটি ওষুধ আবিষ্কার করতে পেরেছেন। এর একটি এইচআইভি ভাইরাস দমনে ব্যবহৃত হয় আর অন্যটি ম্যালেরিয়াবিরোধী চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি ওষুধ  (ক্লোরোকুইন)। কিন্তু দ্বিতীয় ওষুধটির বিরুদ্ধে ম্যালেরিয়াবাহী মশার মধ্যে জেনেটিক প্রতিরোধ গড়ে ওঠায় তা দীর্ঘদিন ব্যবহার হয়নি। ওষুধ দুটি কয়েকজন রোগীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে সফলতা পাওয়া গিয়েছে। চীনের মেডিকেল কর্তৃপক্ষ জাপানের ‘ফ্যাভিপিরাভির’ নামের একটি ওষুধ এই ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর বলে দাবি করেন। যদিও এই ওষুধটি ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য তৈরি করা  হয়েছিল। কিন্তু এটি নাকি এখন করোনা সংক্রমনের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও কার্যকর। এই ভাইরাসটি করোনার উৎপত্তিস্থল উহান ও শেনজেনের ৩৪০ জন রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়। আর এতে দেখা যায়, আশা জাগানিয়া সাফল্য।

 

সর্বশেষ খবর