হৃদয়বিদারক আর কাকে বলে! খাবারের সঙ্গে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হলো মুক্ত পরিবেশে বিচরণ করা বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ১৬টি বানর। এ ঘটনায় মাদারীপুর সদর থানায় মামলা করা হয়েছে। জানা গেছে, মাদারীপুর পৌরসভার চরমুগরিয়ার ঐতিহ্যবাহী বানর এমনিতেই আগের মতো আর চোখে পড়ে না। যা আছে তাও বিলুপ্তপ্রায়। এমন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকালে কৌশলে দুষ্কৃতকারীরা পরিকল্পিতভাবে বানরগুলোকে হত্যা করে। এতে দোষীদের বিচারের দাবিতে ফুঁসে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আর বন বিভাগের পক্ষ থেকেও একটি মামলা করা হয়েছে। জঘন্য এ বানর হত্যার বিচারের আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আড়িয়াল খাঁ নদীবেষ্টিত মাদারীপুরের চরমুগরিয়া অঞ্চল বনজ ও ফলদ গাছে পূর্ণ ছিল। মুক্তিযুদ্ধের আগে এ বনে ১০ হাজারের মতো বানর ছিল। তখন জঙ্গল ও শত শত গাছ থাকায় বানরগুলোর বিচরণ ছিল চরমুগরিয়ার পুরো এলাকায়। জেলা বন বিভাগের তথ্যমতে, চরমুগরিয়ায় এখনো আড়াই হাজারের মতো বানর আছে। এমতাবস্থায় মঙ্গলবার বিকালে বেশ কয়েকটি বানরের মুখ দিয়ে বিষাক্ত লালা পড়তে দেখা যায়। তখন কয়েকটি বানর মারা যায়, আর কয়েকটি বিষক্রিয়ায় কাতরাচ্ছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে ১২টি ও বুধবার সকালে আরও চারটি বানর মারা যায়। পরে বানরগুলো সংগ্রহ করে মাটি দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিষয়টি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। একটি নির্ভরযোগ্য তথ্যমতে, খাদ্য সংকটের কারণে বানরগুলো বাসাবাড়িতে বিভিন্ন সময় হানা দিত। এ কারণে কেউ বানরগুলোকে মেরেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘এটা খুবই অমানবিক। বানরগুলো মাদারীপুরের ঐতিহ্য। শত বছর ধরে এ বানরগুলো মানুষের প্রতিবেশীর মতোই বসবাস করে আসছে। কেউ কখনো বানর মারেনি। কিছু অমানুষ এ বানরগুলোকে মেরে ফেলেছে। আমরা এর বিচার চাই।’ এ ব্যাপারে মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা তাপস কুমার গুপ্ত বলেন, এ ঘটনায় মাদারীপুর বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে মাদারীপুর সদর থানায় বানর হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগীয় তদন্তও চলছে। মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, বানর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার জন্য বন বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি এ ঘৃণ্য ও নিষ্ঠুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান। উল্লেখ্য, বানরের জন্য মাদারীপুর সদর উপজেলার কুমার নদের তীরে নয়াচর এলাকায় ১৮ একর জায়গাজুড়ে ইকোপার্ক নির্মাণ করা হলেও বানরগুলো আজও সেখানে নেওয়া সম্ভব হয়নি।