বুধবার, ৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

উপসর্গ নিয়ে আরও ৩০ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নারী  শিশুসহ ২০ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল আরও ১০ জন মারা গেছেন। সব মিলে গতকাল ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে খুলনায় তিনজন, কুমিল্লায় দুজন, চট্টগ্রামে দুজন, চাঁদপুর, ফেনী ও ঝালকাঠিতে একজন করে মারা গেছেন। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে। অনেককেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলে ২০ জনের মৃত্যু : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সোমবার  বিকাল ৪টা থেকে গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত নারী শিশুসহ ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। বাকি সবাই করোনা  সন্দেহ ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ নিয়ে মারা গেছেন ডাক্তার নিত্য নন্দন দাস (৬৫), আবদুল কুদ্দুস  (৬০), জামিল হোসেন (৩৪) ও মো. পরেশ আলী (৬৮)। এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ইসহাক বেপারী (৬০), আউয়াল (৮০), হুমায়ুন (৫০), শফিউদ্দিন (৭৮), মোজাম্মেল (৫৬), সাবের (৬০), খসরু পারভেজ (৬৮), মনোয়ারা বেগম (৬০), শওকত (৪৩), আবদুল্লাহ (০৬), আবদুল লতিফ (৭০), মো. নাজিম (৬৮), রেনোয়ারা বেগম (৫৩), মর্জিনা (৪৫), নূর নাহার (৬৫), সালাউদ্দিন (৬০)। 

জেলায় জেলায় ১০ জনের মৃত্যু : আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী- খুলনায় একই দিনে করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে তাদের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে খুলনা মহানগরীর শেখপাড়া বাগানবাড়ি এলাকার নজরুল ইসলাম (৩৯) তিন দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। এ ছাড়া যশোর মনিরামপুর এলাকার তহমিনা (৩৬) কিডনি সমস্যা নিয়ে ১ জুন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শ্বাসকষ্ট বাড়লে রাতেই তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোরে তার মৃত্যু হয়। একই জেলার ঝিকরগাছা এলাকার ফারুক হোসেন (৫২) করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এ তথ্য দিয়েছেন। এদিকে খুলনায় এখন পর্যন্ত করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ জন।

কুমিল্লার লাকসামে করোনা উপসর্গ নিয়ে নয় ঘণ্টার ব্যবধানে মারা গেছেন দুই ব্যবসায়ী- লোকমান হোসেন (৪৪) ও স্বপন কান্তি সাহা (৪৬)। করোনা উপসর্গ থাকায় মারা যাওয়ার এক দিন আগে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। জানা গেছে, শহরের সামনিরপুল এলাকার লোকমান ফার্মেসির মালিক লোকমান হোসেন সোমবার রাত ১১টার দিকে জ্বর, হাঁচি, কাশি ও শাসকষ্টে পৌর শহরের পুরাতন বাজার নিজ বাসায় মারা যান। গার্মেন্টের মালিক স্বপন কান্তি সাহা জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে সোমবার সকাল ৮টার দিকে চিকিৎসার জন্য কুমিল্লায় নেওয়ার পথে মারা যান। লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবদুল আলী জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে দুই ব্যবসায়ী মারা গেছেন। মারা যাওয়ার আগে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলে করোনা ছিল কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। ফেনীর দাগনভূঞায় জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ৩৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি সোমবার সন্ধ্যায় পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে মারা যান বলে পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রায়হান জানান। তিনি বলেন, ওই যুবক পেশায় একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। দুই মাস আগে (লকডাউনের শুরুতে) তিনি কর্মস্থল চট্টগ্রাম থেকে বাড়ি আসেন। সম্প্রতি তার জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তিনি শনিবার ফেনী জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। সোমবার বিকাল থেকেই হঠাৎ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে; সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। চট্টগামে গতকাল উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা গেছেন। এর মধ্যে একজন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রশাসন বিভাগের ম্যানেজার। আরেকজন পুলিশের সদস্য। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মর্তুজা কাইয়ুম (৪৫) নামের ওই পুলিশ সদস্য মারা যান। এএসআই মর্তুজা কাইয়ুম সদরঘাট থানায় কর্মরত ছিলেন বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি বলেন, জ্বর-সর্দি হওয়ায় এএসআই মর্তুজা ১৯ মে থেকে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২৭ মে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়। আগে একবার তার নমুনা পরীক্ষা করা হলেও রিপোর্ট নেগেটিভ জানিয়ে এডিসি বক্কর বলেন, কভিড-১৯ এর উপসর্গ থাকায় মৃত্যুর পর তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোর ৫টায় ৩২ বছর বয়সী ওই নারীর মৃত্যু হয়। ওই নারীর বাড়ি জেলার হাইমচর উপজেলায়। সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুজাউদ্দৌলা রুবেল জানান, গত সোমবার রাতে ‘করোনাভাইরাসের উপসর্গ’ জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওই নারী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাকে ঢাকায় স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। ওই নারী কভিড-১৯ আক্রান্ত ছিলেন কিনা তা জানার জন্য মৃত্যুর পর তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ঝালকাঠির নলছিটিতে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টে জামাল উদ্দিন হাওলাদার (৬০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টায় উপজেলার রায়াপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। এক সপ্তাহ ধরে তিনি এসব সমস্যায় ভুগছিলেন। নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মুনীবুর রহমান জানান, জামাল উদ্দিন হাওলাদার আগে থেকেই শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ছিলেন। এক সপ্তাহ আগে তিনি জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মঙ্গলবার তার মৃত্যু হয়। তিনি কভিডে আক্রান্ত ছিলেন কিনা, তা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর