বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
স্থবিরতা কাটাতে ব্যস্ত দুই দল

সেপ্টেম্বরে শুরু আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজ

রফিকুল ইসলাম রনি

সেপ্টেম্বরে শুরু আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজ

দীর্ঘ ছয় মাস পর আবার শুরু হচ্ছে আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলা সম্মেলন। করোনার কারণে থমকে থাকা রাজনীতির চাকা সচল হবে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে। জেলা-উপজেলা সম্মেলন শুরু করার আগে ১০ সেপ্টেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানা গেছে। ঘোষণা করা হবে আওয়ামী লীগের পাঁচ সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও। আর যেসব জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই সেটাও পূরণ করা হবে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। দলের একাধিক সূত্রে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

সূত্রমতে প্রতি দুই মাস পরপর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে এবার ছয় মাস বৈঠক হয়নি। ১০ সেপ্টেম্বর বৈঠক হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘদিন পর ওই বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে যেসব জেলা-উপজেলা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ সেসব জেলা-উপজেলায় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা, মতবিনিময়, কর্মিসভার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। পাপিয়া, সাহেদ কা-ের পর তৃণমূলে শুদ্ধি অভিযানের নির্দেশ আসতে পারে বলেও বলছেন কেউ কেউ। তালিকা ধরে বের করে দেওয়া হবে দলে অনুপ্রবেশকারীদের। একই সঙ্গে জোরদার করা হতে পারে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দলীয় সূত্রমতে আওয়ামী লীগের তৃণমূল এখন চরম অগোছালো। ২০১৯ সালের নভেম্বরে  জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ ঠিক করার আগে মাত্র তিনটি জেলার সম্মেলন করা হয়। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ হওয়ার পর তড়িঘড়ি ২৯টির মতো জেলা সম্মেলন শেষ করা হয়। এসব জেলায় সম্মেলন হলেও অধিকাংশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটি হওয়ার পর রাজশাহী মহানগরী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা এবং পাঁচটি উপজেলার সম্মেলন হয়। ঢাকা বিভাগের কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সম্মেলন হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় অধিকাংশ জেলাতেই দুই থেকে সর্বোচ্চ ১০ নেতায় চালাচ্ছেন জেলার কার্যক্রম। উপজেলাগুলোতেও একই অবস্থা। মার্চ থেকে মহামারী করোনার কারণে থমকে যায় সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম। তবে করোনা, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী।

দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলের কার্যনির্বাহী সংসদের নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে একাধিকবার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টেলিফোনেও দিয়েছেন প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও নিয়মিত দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে বসে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে তৃণমূল নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। ১০ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকেই জেলা-উপজেলা সম্মেলন, সদস্য সংখ্যা বাড়ানো ও দলে অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্য, সম্পাদকম-লীর তিনজন ও তিন কেন্দ্রীয় সদস্যের নাম চূড়ান্ত করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক করতে পারিনি। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বৈঠক হবে।’ দীর্ঘদিন পর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে মনে করেন এই প্রেসিডিয়াম সদস্য।

দলীয় সূত্র জানান, ইতোমধ্যে যেসব জেলায় সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, সেসব জেলা নেতাদের কমিটি ঘোষণা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দলের পাঁচটি সহযোগী সংগঠনের কমিটিও আগামী মাসে ঘোষণা করা হতে পারে।

দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম কিন্তু বসে নেই। করোনা, বন্যাকালে জনগণের পাশে দাঁড়ানোও সাংগঠনিক কাজের অংশ। তবে জেলা সম্মেলন বা কমিটি গঠন এসব কাজ স্থগিত ছিল। সেপ্টেম্বর থেকে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করব। এ সময় সংগঠন ও সম্মেলন হলেও যেসব জায়গায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি সেগুলো সম্পন্ন করা হবে।’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা ছয় মাস জেলা-উপজেলা সম্মেলন কিংবা কমিটি গঠনের কাজ করতে পারিনি। সেপ্টেম্বরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কর্মিসভা, বর্ধিত সভা শুরু করতে যাচ্ছি। এর আগে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলীয় সভানেত্রীর গাইডলাইন নিয়েই আমরা নতুন উদ্যমে যাত্রা করব।’

সর্বশেষ খবর