বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ভ্যাকসিন কিনতে ব্যয় হবে ৮ হাজার কোটি টাকা

মানিক মুনতাসির

করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) মহামারী থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে ভ্যাকসিন বা টিকা উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গেই কিনতে চায় সরকার। এ জন্য সরকারের অর্থ, স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোরালোভাবে কাজ করছে। আর দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের মোট জনগণের ২০ শতাংশের জন্য বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। তবে সেই ভ্যাকসিন পেতে দেরি হতে পারে। এ জন্য সরকার ভ্যাকসিন কিনতে আগ্রহী। এ নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এখন পর্যন্ত যে হিসাব পাওয়া গেছে তাতে দেশের সব মানুষের জন্য ভ্যাকসিন কিনতে আট হাজার কোটি টাকার মতো লাগতে          পারে। করোনা সংক্রান্ত জরুটি প্রয়োজন মেটাতে যে ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে, সেই টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন কেনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে বরাদ্দ দেওয়ার সময় অবশ্যই সঠিক নিয়মে কার্যকরী ভ্যাকসিন কেনার শর্তজুড়ে দেওয়া হবে। এদিকে করোনার ভ্যাকসিন বিষয়ে গত সোমবার সবিচালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, দ্রুত ও সাশ্রয়ী মূল্যে কার্যকর ভ্যাকসিন যেখানে পাওয়া যাবে সেখান থেকে সংগ্রহ করা হবে। ইতিমধ্যে অনেক দেশ ভ্যাকসিন উৎপাদনে এগিয়ে গেছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, চীনের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, রাশিয়া, আমেরিকায় ফাইজা ও মডার্না অ্যাডভান্স স্টেজে আছে। আমরা গত জুলাই মাসেই এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে, তারা ভ্যাকসিন পেলে নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দিতে পারবে। অন্যান্য দেশের যেসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন উৎপাদনে এগিয়ে আছে তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ চলছে। এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা জানিয়েছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীই নেবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকার এখন পর্যন্ত চার দেশের কাছে ভ্যাকসিন বিষয়ে তথ্য জানতে চিঠি দিয়েছে। দেশ চারটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন এবং রাশিয়া। তবে কারও কাছ থেকেই ফিরতি জবাব এখনো পাওয়া যায়নি। কেবলমাত্র চীন বাংলাদেশে তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল দিতে চাইলেও অজানা কারণে তা এখনো সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য করোনার টিকা নিশ্চিত করতে ১৩ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিশ্বের কোন দেশ থেকে কোন প্রক্রিয়ায় ভ্যাকসিন আনা হবে তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সময়মতো অর্থ সরবরাহে কাজ শুরু করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। কোন দেশের টিকা অধিক কার্যকর ও সহজলভ্য হবে সেটা জানতে কাজ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে ভ্যাকসিন দেশের নাগরিকদের বিনামূল্যে দেওয়া হবে নাকি আর্থিক মূল্য ধার্য করা হবে এবং কারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন পাবেন সে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ভ্যাকসিন আসার আগেই এ বিষয়ে গাইডলাইন দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

 

এদিকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানান, ভ্যাকসিন দ্রুত আনতে প্রয়োজনীয় অর্থ রাখা আছে। এখন কীভাবে সবচেয়ে কার্যকর ভ্যাকসিন দ্রুত ও সুলভে পাওয়া যায় সেই বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। প্রথম অবস্থায় দেশের সব মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে না। যারা স্বাস্থ্যকর্মী আছেন বা যারা অগ্রাধিকার পান তাদের আগে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর