বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের তিন বছর

মিয়ানমারের অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

মিয়ানমার জান্তার বর্বরোচিত আচরণে নিজের বসতভিটা ছাড়তে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের তিন বছর পূর্তির দিন ছিল ২৫ আগস্ট। এদিন যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্তদের জবাবদিহির আওতায় আনা এবং রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আবারও উদাত্ত আহ্বান জানাল।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মরগ্যান ওরট্যাগাসের দেওয়া এই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার জান্তার অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানাচ্ছে সংঘাত থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরত থাকতে। ওই এলাকার লোকজনকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় সংলাপ শুরু করা দরকার। অসহায় লোকজনকে মানবিক সহায়তার বিকল্প নেই। বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে উল্লেখ করা হয়েছে, রাখাইনে এখনো হত্যাযজ্ঞ চলছে। হাজার হাজার মানুষকে গৃহত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। আর এই জঘন্য অপতৎপরতা দেশত্যাগীদের স্বেচ্ছায় নিজ বসতভিটায় ফেরার আগ্রহকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। শান্তির প্রত্যাশাও দূরীভূত হচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি নিরাপদে, স্বেচ্ছায়, মর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে নিজ বসতভিটায় ফিরতে আগ্রহী হয় এমন পরিবেশ তৈরির জন্য। এমনকি যারা প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমারেই স্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন, গৃহত্যাগী হয়েছেন, এসব রোহিঙ্গাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ এলাকায় ফিরতে পারেন সে ধরনের সুশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’ অর্থাৎ কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের স্বার্থেই মিয়ানমারকে সবকিছু করতে হবে। ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং গৃহত্যাগ করে মিয়ানমারের অন্যত্র আশ্রয় গ্রহণকারীদের ত্রাণ-সহায়তা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ৯৫১ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা ৮ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদানের জন্য বাংলাদেশের মানবিক দায়িত্ববোধের প্রশংসার কথা পুনরুল্লেখ করতে চাই। একই সঙ্গে সভ্যবিশ্বের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য।

সঙ্গে এ সংকটের স্থায়ী সমাধানেও সবাইকে আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের দুর্দশার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মানবাধিকার হরণ এবং গণহত্যা ও বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ এবং ভিসা রহিত করা। জাতিসংঘের তদন্ত প্রক্রিয়াকে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক বিচারাদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারকে অংশগ্রহণের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশ পালনেও মিয়ানমার সরকারকে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা নিধনের ষড়যন্ত্রে লিপ্তদের বিচারের কাঠগড়ায় তুলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সংঘবদ্ধ যে চেষ্টা চালানো হচ্ছে, এর প্রতিও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিচ্ছে। কারণ মানবতা অটুট রাখতে এমন আচরণে লিপ্তদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর বিকল্প নেই।

বিবৃতিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বৈরাচার-স্বেচ্ছাচারিতার চির অবসানে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের চলমান আন্দোলনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। কারণ এর মধ্য দিয়েই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রসার এবং বহুল প্রত্যাশিত সামাজিক শান্তি স্থাপনের পথ সুগম হবে।

সর্বশেষ খবর