সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অবৈধ সম্পদের পাহাড় বিএনপি নেতা তৈমূরের

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবৈধ সম্পদের পাহাড় বিএনপি নেতা তৈমূরের

বিভিন্ন সময় অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এক সময়ের বিএনপির দাপুটে নেতা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। অবৈধ সম্পদ অর্জনের চোরাগুপ্ত সব পথ নখদর্পণে এই চতুর আইনজীবীর। সম্প্রতি তৈমূর আলম ব্যস্ত রয়েছেন রিট বাণিজ্য নিয়ে। জামায়াত-বিএনপির লোকজন নিয়ে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান আর রিট করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। বিরোধী দলের রাজনীতি করেও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের মতোই সব দফতরের সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে পারেন তৈমূর। অনুসন্ধানে জানা যায়, এক সময়ের বিএনপির দাপুটে নেতা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বিরোধী দলের রাজনীতি করেও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের মতোই সব দফতরের সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে পারেন। চলাফেরা করেন কোটি টাকার প্রাডো গাড়িতে। তার নিজ জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসীতে রয়েছে অঢেল জমিজামা। নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর ও রাজধানীর লালমাটিয়ায় নিজ নামে ১৭ শতাংশ জমিতে ছয়তলা বাড়ি এবং রাজউকের কাছ থেকে পাওয়া পাঁচ কাঠার একটি প্লট। তাঁর স্ত্রী হালিমা ফারজানার নামে ঢাকার তোপখানা রোড মেহেরবা প্লাজা ও সেগুনবাগিচায় তিনটি ফ্ল্যাট ও ফতুল্লার বিসিক এলাকায় প্লট। স্টেডিয়াম মার্কেট, জোরায় সাহারাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নামে বেনামে দোকান ও ফ্ল্যাট। এসব কারণে বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে ১১টি দুর্নীতির মামলা হয়েছে। বিগত ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দুদক তৈমূরের কাছে সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিলের নোটিস দেয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হিসাব বিবরণী দাখিল না করায় কমিশনের তৎকালীন উপ-সহকারী পরিচালক মো. আবদুল কাদের জিলানী ২০০৮ সালের ৪ এপ্রিল লালবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেন। সে মামলায় তাকে দুই বছর বিনাশ্রম কারদন্ড দেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আশরাফ হোসেন। সে সময় আদালতে তৈমূর দুর্নীতির কথা স্বীকার করে বিনাশ্রমের পরিবর্তে সশ্রম কারাদন্ড দাবি করে ব্যাপক আলোচনায় আসেন। সম্প্রতি তৈমূর আলম ব্যস্ত রয়েছেন জামায়াত-বিএনপির লোকজন নিয়ে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান আর আদালতে রিট বাণিজ্য নিয়ে। শিল্পাঞ্চল রূপগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত করতে তৈমূর উক্ত প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজ স্থগিত করতে আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করে দেন। প্রতিষ্ঠান আইনগতভাবে তার রিটের জবাব দিতে এলে জামায়াত-বিএনপির লোকজন নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন আর বিক্ষোভ শুরু করেন। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি দিয়ে কাজ স্থগিতের চেষ্টা চালান চতুর তৈমূর। প্রতিষ্ঠান কোণঠাসা অবস্থায় চলে এলে মীমাংসার জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের কাছে আপস প্রস্তাব পাঠায় তৈমূর। লোকজন আদালতের মারপ্যাঁচে না পড়ে হয়রানি থেকে রেহাই পেতে তার হাতে তুলে দেন কোটি কোটি টাকা। এভাবেই প্রতিনিয়ত তার সম্পদ ফুলে ফেঁপে উঠছে। এসব ব্যাপারে তৈমূর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এক-এগারোর পর তারেক রহমানের মামলার আইনজীবী ছিলাম আমি। এ কারণেই ওই সময়ের সরকার গ্রেফতার করে আমার বিরুদ্ধে এসব দুর্নীতির মামলা দিয়েছে। এসব মামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করেছি। এ ছাড়া বিভিন্ন সম্পদ থেকে ভাড়া ও মুনাফা আসে। সেটা দিয়ে নেড়েচেড়ে খাই। সঠিকভাবে তদন্ত করলে কেউ আমার কোনো দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে না।

সর্বশেষ খবর