একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় রানীনগরের আতাইকুলা গ্রামে ৫২ জন শহীদের স্মৃতিস্থান আতাইকুলা বধ্যভূমি। জায়গাটি রয়েছে অযতœ অবহেলায়। পাঁচ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী এটির উন্নয়নে নির্দেশনা ও অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিলেন কিন্তু আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি সে নির্দেশনা।
এ অবস্থায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের উদ্যোগেই কোনো রকমে বধ্যভূমিটি ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন মনোয়ারা হক ১৯৯৬ সালে নিজ উদ্যোগে কিছু অনুদান দিয়ে ফলকে শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ করার কাজ সম্পন্ন করে দেন। এরপর আর কোনো কাজ হয়নি। গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যাওয়া আতাইকুলা গ্রামের প্রদ্যুৎ চন্দ্র পাল, সাধন চন্দ্র পাল ও নিখিল চন্দ্র পাল বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল ছিল রবিবার। সকাল ১০টায় ছোট যমুনা নদী পার হয়ে চলে আসে একদল হানাদার পাকিস্তানি সেনা। মুক্তিযোদ্ধারা গ্রামে আছে বলে তারা সন্দেহ করে প্রথমেই গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে প্রতি বাড়ি থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ নারী-পুরুষকে ধরে ওই গ্রামের বলরাম চন্দ্রের বাড়ির উঠানে নিয়ে যায়। সেখানে পুরুষদের উঠানে সারিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রাখে আর উঠানের পাশেই নারীদের একটি ঘরে আটকে রাখে। এরপর একের পর নারীদের ওপর হানাদাররা চালায় পাশবিক নির্যাতন। শেষে সারিবদ্ধ পুরুষদের ওপরে করে ব্রাশফায়ার। মুহূর্তেই ৫২ জন শহীদ হন। যাওয়ার সময় হানাদাররা বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। শহীদদের মধ্য থেকে গুলিবিদ্ধ হয়েও কোনো রকমে বেঁচে যান প্রদ্যুৎ পাল, সাধন পাল ও নিখিল পাল।
শহীদ গোবিন্দ চরণ পালের ছেলে গৌতম পাল বলেন, অনেক চেষ্টার পর ২০১৫ সালে প্রধামন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বধ্যভূমি সংরক্ষণ, শহীদদের নাম সরকারি গেজেটে অন্তর্ভুক্তি, স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ ও শহীদদের অসহায় পরিবারকে মূল্যায়ন ও আর্থিক সাহায্য প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের সমস্যার কারণে এখন পর্যন্ত বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে। গণপূর্ত বিভাগকে জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্র্র্র্র্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।