করোনা মহামারীতে দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে উজ্জীবিত করতে এবার বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)-এর মাধ্যমে প্রণোদনার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রণোদনা প্যাকেজটি কার্যকর করার জন্য একটি খসড়া নীতিমালাও করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই প্রণোদনার এই ঋণ পাবেন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তারা। এ জন্য পৃথক কোনো জামানত বা ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবে না। শুধু দুজন গ্যারান্টার হলেই এনজিও থেকে প্রণোদনার ঋণ নেওয়া যাবে। এর আগে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদের হার গ্রাহক পর্যায়ে ৪ শতাংশ হলেও নতুন এই প্যাকেজের ঋণের সুদের হার গ্রাহক পর্যায়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ৯ শতাংশ। জানা গেছে, ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য গত এপ্রিলে ২০ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সেখান থেকে ৯ হাজার কোটি টাকার মতো বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো, যা মোট ঋণের অর্ধেকেরও কম। কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে বড় উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ঋণের পুরোটা বিতরণ করা হয়ে গেলেও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য বরাদ্দ ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর অনীহাকে দায়ী করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণ বাড়াতে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একাধিকবার সভাও করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়, দিয়েছে তাগাদা- তাতেও কাজ হয়নি। এ অবস্থায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য এনজিওগুলোর মাধ্যমে নতুন একটি প্রণোদনা প্যাকেজ কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে অতিরিক্ত সুদের হার নিয়ে। সংশ্লিষ্টরা জানান, কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জামানত ছাড়াই যাতে জরুরিভিত্তিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঋণ পান, সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই খসড়া নীতিমালা করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ না হওয়ায় এবার ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, যাতে প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের হাতে প্রণোদনার ঋণ দ্রুত পৌঁছায়। খসড়া নীতিমালায় প্রস্তাবিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার ধরা হয়েছে ১৪ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রাহককে দিতে হবে ৯ শতাংশ; বাকি ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি দেবে। সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন একজন গ্রাহক। এই প্রণোদনা প্যাকেজের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। তহবিলের আকার হতে পারে ৫ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা। নীতিমালায় বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পাশাপাশি যুব উন্নয়ন অধিদফতর, বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তি বা বিদেশ ফেরত যে কোনো উদ্যোক্তা এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এর আগে গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে সিএমএসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বরাদ্দ দেওয়া হলেও এই খাতে বিতরণের হার হতাশাজনক। স্থায়ী জামানত না থাকায় ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে আগ্রহ দেখায়নি। এ অবস্থায় প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা যাতে ঝামেলা ছাড়াই ঋণ পায় সেজন্য নতুন একটি প্রণোদনা প্যাকেজ এনজিওগুলোর মাধ্যমে কার্যকর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকের তুলনায় এনজিওগুলোর ঋণ বিতরণ কার্যক্রমে পরিচালন ব্যয় বেশি বলে, প্রণোদনা প্যাকেজের সুদের হারও কিছুটা বেশি পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে এনজিওগুলোর সঙ্গে সভাও হয়েছে বলে জানান আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এই কর্মকর্তা।