রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বেহাল কুয়াকাটা সৈকত

আনন্দ হয় নিরানন্দ দেখার কেউ নেই

রাহাত খান, বরিশাল

বেহাল কুয়াকাটা সৈকত

ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। পুরো সৈকতজুড়ে ইট, সুরকি পাকা ভবনের ভগ্নাংশ মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। পর্যটকরা সৈকতে নেমে ইট-সুরকির পাকা ভগ্নাংশে হোঁচট খেয়ে রক্তাক্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে জোয়ারের সময় এই সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। এ ছাড়া সৈতকজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা আবর্জনা। এতে বিরক্ত দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। তবে এ নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই কুয়াকাটা পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।  একই স্থানে দাঁড়িয়ে সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত উপভোগের বিরল সুযোগ রয়েছে সাগর কন্যা কুয়াকাটা সৈকতে। এ কারণে সারা বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটকে মুখর থাকে দেশের সর্ব দক্ষিণের কুয়াকাটা সৈকত। বিভিন্ন উৎসব পার্বণে প্রচুর দর্শনার্থী সমাগম হয় কুয়াকাটায়। শীত মৌসুমে সমুদ্র দর্শনে আসেন অগণিত নারী-পুরুষ ও শিশু। অথচ ব্যাপক সম্ভাবনাময় এই পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নে সুদৃষ্টি নেই কর্তৃপক্ষের। পর্যটক নূর হোসেন বলেন, সমুদ্র সৈকতে এভাবে ইট, সুরকি এবং পাকা ভবনের উচ্ছিষ্টাংশ পড়ে থাকবে সেটা ভাবা যায় না। এটা কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা।  আরেক পর্যটক হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভাটার সময় পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যায়। তখন ঝুঁকি নিয়ে হলেও দেখেশুনে সৈকতে হাঁটা-চলা যায়। এতেও অনেকের পায়ে ইট-সুরকির খোঁচা লাগে। একটু অসতর্ক হলেই আহত হন পর্যটকরা। কিন্তু জোয়ারের সময় ইট-সুরকি ভবনের ভগ্নাংশ পানিতে তলিয়ে থাকায় অজানা-অচেনা পর্যটকরা সৈকতে নেমে দুর্ঘটনার শিকার হন। তখন আনন্দ পরিণত হয় নিরানন্দে।

পর্যটক নুরুল আলম নুরু বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের অব্যবস্থাপনা দেখে মনে হয় না এর কোনো দেখভালকারী কর্তৃপক্ষ রয়েছে। অথচ সরকার একটু সুদৃষ্টি দিলে কুয়াকাটা সৈকতে স্বাচ্ছন্দ্যে বেড়াতে পারতেন পর্যটকরা।  কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা জানান, বাঁধের বাইরের অংশে সৈকতে এলজিইডির রেস্ট হাউস ও সীমানা প্রাচীর ছিল। কয়েক বছরে সমুদ্রের ভাঙনে এলজিইডির ওই রেস্ট হাউস, পাবলিক টয়লেটসহ বেসরকারি অনেক পাকা স্থাপনা সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। এসবের ধ্বংসাবশেষ বড় বড় পিলার-ভিমগুলো পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পক্ষে অপসারণ করা সম্ভব নয়। সৈকতে পড়ে থাকা ভাঙা ইটের আধলা, সুরকি, পাকা ভবনের ভগ্নাংশ ও ময়লা-আবর্জনা পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নিয়মিত পরিষ্কার করে। কিন্তু আবারও পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ১০-১৫ দিন ধরে ওদিকে নজর দিতে পারিনি। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরাও ঠিকভাবে সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখে না। তবে শিগগিরই সৈকত থেকে ইট-সুরকি বা ভবনের ভগ্নাংশ অপসারণের কথা বলেন পৌর মেয়র বারেক মোল্লা।

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ড. অমিতাভ সরকার বলেন, একাধিক পাকা স্থাপনা সমুদ্রের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এসব অবকাঠামোর অবশিষ্টাংশ সৈকতে পড়ে থাকায় পর্যটকদের সমস্যা হচ্ছে। জোয়ারের সময় এই সমস্যা আরও প্রকট হয়। তিনি নিজেও কুয়াকাটা সৈতক পরিদর্শনে গিয়ে এই দুরবস্থা দেখেছেন। এগুলো দ্রুত অপসারণ করার ব্যবস্থা নিতে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্যটকরা যাতে কোনো ভোগান্তি কিংবা দুর্ঘটনার শিকার না হন সেজন্য কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হবে বলে জানান বিভাগীয় কমিশনার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর