রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনার নতুন স্ট্রেইন ছড়িয়েছে ইউরোপের আট দেশে

প্রতিদিন ডেস্ক

ক্রমশ আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন। এরই মধ্যে ইউরোপের আটটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ‘বহুরূপী’ কভিড-১৯। শুক্রবার রাতে করা এক টুইটে এ কথা জানিয়েছেন ‘হু’র ইউরোপ শাখার প্রধান হান্স ক্লুজ। সেই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে তাও জানিয়েছেন তিনি। সূত্র : রয়টার্স

হান্সের দাবি, নতুন এই স্ট্রেইন কম বয়সীদের মধ্যে আগেরটির তুলনায় আরও বেশি ছড়াচ্ছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চলছে। এই মুহূর্তে বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন বলেই জানান তিনি। তাই মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার মতো কভিড বিধিগুলোর প্রয়োজনীয়তা সবার কাছে তুলে ধরেন হান্স। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন, পুরো বিষয়টির দিকেই নজর রেখেছেন এবং প্রয়োজন মতো আপডেটও দেবেন তারা।

প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই করোনার এই নতুন রূপটি ধরা পড়েছিল ব্রিটেনে। তারপর থেকে ক্রমেই বেড়েছে আতঙ্ক। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ক্রিসমাসের আগেই দেশের একাংশে ফের লকডাউনের ঘোষণা করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতদিনের চেনা সার্স- কোভ-২ এর চেয়ে করোনার এই নতুন স্ট্রেইন আরও তাড়াতাড়ি ছড়ায়। এই পরিস্থিতিতে বহু দেশই নতুন করে আন্তর্জাতিক বিমান বন্ধ রেখেছে।

এদিকে ব্রিটেনের স্ট্রেইনটির চেয়েও কয়েক গুণ বেশি সংক্রামক ভাইরাস প্রজাতির সন্ধান মিলেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। এই নতুন প্রজাতি দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সম্ভবত আরও বড় দ্বিতীয় ঢেউয়ের মুখোমুখি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের নতুন রূপ এরই মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে। গত এক দিনে সেখানে নতুন ১৪ হাজার আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। মারা গেছেন ৪০০-এরও বেশি মানুষ। অতিমারী শুরুর পর থেকে এর আগে কখনো দক্ষিণ আফ্রিকায় এমন প্রকোপ দেখা যায়নি ভাইরাসের। সব মিলিয়ে ভ্যাকসিনের আশার আলোর মাঝেই করোনার নতুন স্ট্রেইনকে ঘিরে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।

ভারতে ধরন মিলেছিল মার্চেই : যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের যে নতুন ধরন (রূপান্তরিত রূপ) শনাক্ত হয়েছে, ভারতে অনেকটা একই প্রকৃতির ধরন পাওয়া গিয়েছিল গত মার্চ মাসে। সম্প্রতি এই দাবি করেছেন দেশটির বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিলের (সিএসআইআর) ইনস্টিটিউট অব জিনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির (আইজিআইবি) পরিচালক অনুরাগ আগারওয়াল। সূত্র : দ্য ওয়াল। এই গবেষক বলেন, ভারতে যখন করোনা মহামারী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখনই একটি অতিসংক্রামক ধরন শনাক্ত হয়। অর্থাৎ গত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে এমন একটি ধরন ছড়িয়েছিল ভারতে। তবে ভারতে করোনার সেই নতুন ধরন বেশি দিন টেকেনি। আইজিআইবি পরিচালক বলেছেন, জুন মাসের মধ্যেই ভারত থেকে নতুন ধরনটি নির্মূল হয়ে যায়। তিনি বলেন, করোনার ওই নতুন ধরন বেশি মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারেনি। হয়তো কোনোভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাই মাস দুয়েকের মধ্যেই সেটি পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যায়।

যুক্তরাজ্যে করোনার যে নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়েছে তার নাম দেওয়া হয়েছে বি.১.১.৭ বা ভিইউআই-২০২০১২/০১। এতে মোট ১৭টি জিনগত পরিবর্তন হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। অনুরাগ আগারওয়াল বলেন, ভারতে যে ধরন পাওয়া গিয়েছিল তার নাম এ-৪। দিল্লি, হায়দরাবাদ, কর্ণাটকের করোনা রোগীদের নমুনায় এর উপস্থিতি পাওয়া যায়। এই ধরনটিরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা ছিল। তবে প্রায় একই সময় করোনার দুর্বল জিনেরও খোঁজ মেলে সেখানে। সিএসআইআরের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, করোনাভাইরাস এতবার জিনের গঠন বদলেছে এবং এখনো বদলাচ্ছে যে, এর প্রতিটা ধরনই একে অপরের চেয়ে আলাদা। দেখা গেছে, এক রোগীর শরীরে ভাইরাসের যে ধরন রয়েছে, তা পাশের জনের চেয়ে আলাদা। অর্থাৎ একজন থেকে অন্য জনের শরীরে সংক্রমিত হওয়ার আগেই জিনের গঠন বা বিন্যাস বদলে ফেলছে এই ভাইরাস। ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তনের কারণ প্রসঙ্গে গবেষকরা বলেন, তাকে বেশি দিন টিকে থাকতে হবে। ইনকিউবেশন পিরিয়ড বা বেঁচে থাকার সময় বাড়ানোর চেষ্টায় ভাইরাসগুলোর মধ্যে এই পরিবর্তন ঘটে।

সর্বশেষ খবর